হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের সব দোসরের বিচার হবে

16

চকরিয়া ও পেকুয়া প্রতিনিধি

এক দশক পর নিজের এলাকায় ফিরলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছেন। এরপর সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে চকরিয়া-পেকুয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে চকরিয়ায় পৌঁছতে প্রায় সোয়া ৫টা বেজে যায়। পর সেখান থেকে পেকুয়ায় পৌঁছেন সন্ধ্যা পৌনে সাতটায়।
চকরিয়া : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশের গুম খুনের নায়ক শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদের সকল দোসরদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই করা হবে। এদেশে জুলম-নির্যাতন আর সহ্য করা হবে না। এদেশে আইনের শাসন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শত সহস্র শহীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শত-সহস্র শহীদের রক্তের অঙ্গীকার ছিল বৈষম্যহীনবাংলাদেশ গড়ার। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭৫ সালে একটা বিচার দেখেছিল কিন্তু তা থেকেও আওয়ামী লীগ কোন শিক্ষা নেয়নি। এদেশে গণহত্যাকারীদের কোন জায়গা হবে না। দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্র করা হলে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা হবে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আমরা সবাই বাংলাদেশী। এদেশে সবার বৈষম্যহীন অধিকার নিশ্চিত করা হবে। কেউ সংখ্যালঘু হিসেবে থাকবে না। গতকাল বুধবার বিকালে চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনালে চকরিয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি উদ্যোগে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কক্সবাজার থেকে দুপুর ২টায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ চকরিয়ায় গণসংবর্ধনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পথে পথে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড়ের কারণে সভাস্থলে আসেন বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে। তার আগেই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা লখো জনতার উপস্থিতিতে গণসংবর্ধনাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে জায়গার সংকুলান না হলে পৌর বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর এবং মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থেকে হাজার হাজার জনতা তাদের প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য শোনেন। এ সময় মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরায়েজীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনায় আরো বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, জেলা যুবদল সভাপতি ছৈয়দ আহমদ উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক মো. নিশান, জেলা শ্রমিকদল সভাপতি রফিকুল ইসলাম, চকরিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, উপজেলা বিএনপি নেতা এম মোবারক আলী প্রমুখ। এছাড়া চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা গণসংবর্ধনায় বক্তব্য রাখেন।
পেকুয়া : ছাত্রদের আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। গতকাল বুধবার পেকুয়ায় গণসংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদের আগমন উপলক্ষে গতকাল বিকেলে পেকুয়া চৌমুহনী শহীদ ওয়াসিম চত্বরে গণসংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম বাহাদুর শাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা সভায় তিনি আরও বলেন, আমরা এখনো চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি। যেদিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, সেইদিন বিজয় চূড়ান্ত হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি সরকারি চাকরিজীবীদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা অবৈধভাবে মানুষকে হয়রানি করবেন না, আপনাদের বেতন দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের টাকা থেকে। সুতরাং এসব মানুষকে সবসময় ভাল সেবা দেবেন। অবৈধভাবে রায় দেওয়া সাবেক বিচারপতি কালো মানিকের অবস্থা দেখেছেন এরকম যেন না হয়। সালাহউদ্দিন আহমেদ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে পেকুয়া চৌমুহনী চত্বরে করা সংবর্ধনা মঞ্চে ওঠেন। মঞ্চ থেকে সরাসরি বক্তব্য রাখেন। প্রায় ১০ মিনিট মঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি। বক্তব্যে শহীদ ওয়াসিম আকরামকে স্মরণ করে বলেন, ওয়াসিম নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে আমাকে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে দেখতে যান। কিন্তু তাকে আর জীবিত দেখতে পেলাম না। এ রকম অসংখ্য ছাত্রজনতাকে হাসিনা নির্বিচারে হত্যা করেছে। তিনি আজ শহীদ ওয়াসিমের কবর জিয়ারত করতে যাবেন এবং তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, চকরিয়া, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও মিছিল সহকারে পেকুয়া কলেজ গেটের চৌমুহনী মোড়ে এসে লোকে লোকারণ্য হয়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় সভাস্থল। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও হাজার হাজার মানুষের মোবাইলের আলোতে অন্ধকারে আলোকসজ্জার মত পরিণত হয়েছে। চৌমুহনী থেকে পশ্চিমে পেকুয়া বাজার, দক্ষিণে পেকুয়া মিনি স্টেডিয়াম, উত্তরে মোলভী পাড়া ব্রিজ এবং পূর্বে সাবেক গুলদী স্টেশন পার হয়ে যায়। সালাউদ্দিনকে দীর্ঘ ১০ বছর পর একনজর দেখার জন্য মহিলারও ভিড় জমায় রাস্তার দু’পাশে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইনের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া-পেকুয়ার সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট হাসিনা আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম শাহনেওয়াজ আজাদ, উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুটসহ আরও অনেকে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল, মহিলাদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।