সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত চালক-মালিক

19

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল নিয়ে চালক-মালিকদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা গেছে। নগরীর চালকদের একাংশ গাড়ি চালাবে বললেও অপর অংশ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। আবার বাদুরতলা এলাকার মালিকরা বলছেন, চালকরা আমাদের সাথে সমাধানে এসেছে তাই আমরা গাড়ি বের করার সিদ্ধান্তে এসেছি। গতকাল বুধবার নগরীতে চলাচলরত ট্যাক্সি মালিক-চালকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া মো. নুর মিয়া মধু বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে সিএনজি ট্যাক্সির মালিকেরা আমাদের ওপর দৈনিক ভাড়া নিয়ে জুলুম করে যাচ্ছে। ইনকাম না হলেও এক হাজার টাকা করে দৈনিক মালিককে দিতে হয়। নগরের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পাহারার নামে ১০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। বিনা অপরাধে চালককে মামলা দেওয়া হয়। সারা দিনে যে টাকা আয় হয়, তার চেয়ে বেশি খরচ দিতে হয়। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা।
আরেক চালক মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেছিলাম। সেখানে কোনো ধর্মঘট বা গাড়ি ভাঙচুর করিনি। দীর্ঘদিন ধরে মালিকরা আমাদের যে দাস বানিয়ে রেখেছে, তা থেকে বের হতে চাই। কথায় কথায় চাবি কেড়ে নেয়া, ৫০ টাকা গুজে না দিলে দারোয়ানরা যে আরেকজনকে চাবি দিয়ে দেয়, তা বন্ধ করতে চাই। গ্যারেজ ভাড়ার নামে অনৈতিক আদায় চাই না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, লাইসেন্স, ডকুমেন্ট ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধ করা, বিনা অপরাধে চালককে মামলা দেওয়া এবং চালকের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা, সহজ শর্তে চালকদের লাইসেন্স প্রদান, অটোরিকশা ও টেম্পোর সর্বোচ্চ ইনকাম কমানো যা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ পূর্বদেশকে বলেন, আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) থানায় বসেছিলাম। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যে, আমরা সরকারি গেজেট অনুযায়ী টাকা প্রদান করতে পারবো। সে সাথে দারোয়ানির টাকা যেটা নেয়া হতো, তা প্রদান করবো না। তাছাড়া আপদকালীন সময়ে আমরা মালিকদের ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকার বেশি দিতে পারবো না। এসব বিষয় যদি মেনে নেয়া হয়, তাহলে আমাদের চালক ভাইয়েরা গাড়ি চালাবে। এটা আমাদের সংগঠনের সিদ্ধান্ত। বাকিদের বিষয়ে বলতে পারবো না।
অন্যদিকে চালকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার নামে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ মালিকদের। এর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকলে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্তে আসেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মালিক পূর্বদেশকে বলেন, নগরীতে পুলিশ, নেতা, সার্জেন্টের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন জেলার সিএনজি ট্যাক্সি ও প্রাইভেট সিএনজি ট্যাক্সি এখানে চালাচ্ছে। গ্রাম ট্যাক্সিও মান্থলির বিনিময়ে শহরে চলাচল করাচ্ছে। আবার সার্জেন্টরা আমাদের গাড়ি জব্দ করলে ট্রাফিক অফিসে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা আদায় করছে, তাদের (সার্জেন্ট ও পুলিশ) গাড়ি জব্দ করলে মাত্র ৭৫০ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া কাগজপত্র হালনাগাদ করতে মাত্র ৬ হাজার টাকা খরচ হতো এখন ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, এসব বৈষম্যের কথা কাকে বলবো? এরপরও আমরা বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও এলাকার কিছু চালকদের গাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাদুরতলা এলাকার সিএনজি ট্যাক্সি মালিক মো. সিরাজুল মোস্তফা, মো. শাহাদাত হোসেন ও নুর মোহাম্মদ কোম্পানির সাথে কথা হলে তারা পূর্বদেশকে বলেন, আমরা থানার মধ্যে চান্দগাঁও কেন্দ্রিক চালকদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, গেজেট অনুযায়ী যে ৯০০ টাকা করে দেয়ার কথা তা আমাদেরকে প্রদান করবে। আমরা নিজেদের মধ্যে সমাধান করেছি। বাকি এলাকার চালকদের বিষয়ে আপাতত বলতে পারছি না।