রাজনীতিকদের ব্যাংক লেনদেনে ‘সতর্কতা’র নির্দেশনা

9

শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্তি সতর্কতা অবলম্বনে সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর প্রধান অর্থপাচার নিরোধ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে এই নির্দেশনা দিয়েছে বিএফআইইউ।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অর্থপাচার নিরোধ বিষয়ক সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ও ব্র্যাক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মইনুল হোসেন এসব বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
বৈঠকে আলোচনার মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নানাভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার চেষ্টা করবেন। তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যাংকিং লেনদেনের সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খবর বিডিনিউজ’র
বেনামি ঋণের বড় অঙ্কের অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বিএফআইইউ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। বড় অঙ্কের লেনদেন থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে।
ব্যাংক এশিয়ার ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউল হাসান বলেন, “দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ এবং ব্যাংক মালিকরা অর্থ সরানো চেষ্টা করবেন। তাই এসব ব্যক্তিদের ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা বিএফআইইউ থেকে দেওয়া হয়েছে।”
সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, শাখা থেকে ভেঙে ভেঙে বড় অঙ্কের টাকা উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যা শাখা পর্যায়ে বোঝা যায় না। এসব প্রধান কার্যালয়ের সিবিএসে হিট করে। তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। যদি সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়, তাহলে দ্রæত রিপোর্ট করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা দুর্নীতির টাকা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সরকার পতনের পর গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক তাদের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫৪৮ কোটি টাকা তোলার চেক প্রত্যাখ্যান করেছে।
টপ টেন ট্রেডিং কোম্পানির ইস্যু করা এই চেকটি এসেছিল ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখায়। কোম্পানিটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে নম্বরটি দিয়ে রেখেছিল তা বন্ধ পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী অস্থিরতার মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের এই চেষ্টা সন্দেহজনক হওয়ায় টাকা উত্তোলনের ওই চেক প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরকার পালাবদলের পর ব্যাংকখাত নড়েচড়ে বসেছে। শুরুটা হয় ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে এসআলম গ্রুপ ব্যাংকটি দখল করার মাধ্যমে লুটপাট চালিয়েছে। তাদের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চাইছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সভায় বলেন, অর্থপাচারে কারা জড়িত জানা যাবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের আমলেই। দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে।
আরেক ডেপুটি গভর্নর বলেন, চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন বলে তারা বড় গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। কারণ তাতে চাকরি চলে যায়।
গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, পলিসি উপদেষ্টা ও বিএফআইইউর প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আন্দোলনে নামেন। বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভ চলছে।