মাদরাসা শিক্ষার ভবিষ্যৎ কোন পথে

8

কাজী মোহাম্মদ আমিন উল্লাহ

বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব বিস্তারে মাদরাসা শিক্ষা তথা ইসলামী শিক্ষা ঐতিহাসিক ভাবে অবদান রেখে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি অমুসলিম দেশ ছাড়া অধিকাংশ মুসলিম দেশে ইসলামি শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষার সাথে সমানতালে অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের মুসলিম গণ মানুষের প্রাণের শিক্ষা ব্যবস্থা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পার হয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রাণের মাদরাসা শিক্ষা বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষার অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। নানান রকম বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে বর্তমান পর্যন্ত অসহায়ত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। একটি কওমি ভাবধারার অপরটি হলো সরকারি ভাবধারার। কওমি ভাবধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও নজরদারি না থাকাতে এরা পাঠ্যসূচি ও শিক্ষা নীতির তোয়াক্কা করেনা। ফলে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যবান জীবন ক্ষতি করছে। জাতীয় ভাবে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবদান বাখতে পারছেনা। অপরদিকে সরকারি তথা আলীয়া মাদ্রাসা সরকারি সহযোগিতা ও সরকারি সিলেবাস মেনে চললেও কালের বিবর্তনে মুসলিম গণ মানুষের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে পঞ্চাশ বছরে ক্ষয় হতে হতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। উপরে সরকারি সহযোগিতার সব দরজা খোলা থাকলেও মাদ্রাসা শিক্ষার মৌলিক ভিত্তিতে ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছে। কালের বিবর্তনে সরকারি মাদ্রাসা থেকে গৌরবোজ্বল উর্দু ফার্সী ভাষার চর্চা ও এই দুই ভাষায় রচিত কিতাবাদী বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগে।
কোরান হাদীসের কিতাবগুলোর ঐতিহাসিক স্বকীয়তা বাদ দিয়ে কাটসাট করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মৌলিক কিতাবাদীর অংশ বিশেষ নিয়ে সিলেবাস করে মৌলিক কিতাব সমূহ সম্পর্কে অজ্ঞাত করে রাখা হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে। এরপরেও মাদ্রাসা শিক্ষা কোন মতে অসহায় ভাবে চলে আসছিলো। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষা তথা আলিয়া নেসাবের শিক্ষায় সর্বশেষ আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেওয়া যে আরবি বিষয়েব উপর মাদ্রাসা শিক্ষার মৌলিকত্ব ও স্বকীয়তা বিরাজমান সে অরবী শিক্ষার বিষয়গুলোকে সরকারি শিক্ষা নীতির নির্দেশনার বাহিরে রাখা হয়েছে। বিষয় গুলোকে একেবারে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরীক্ষার ভিত্তিতে আরবী বিষয় গুলোকে মূল্যায়নের যে ঐতিহাসিক রীতি তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
নতুন কারিকুলামে এই অরবী বিষয় গুলোর অংশগ্রহণ কতোটুকু থাকবে পাবলিক পরীক্ষায় এগুলোর মূল্যায়ন কেমন হবে,নতুন কারিকুলামের বিষয় গুলোর মত আরবি বিষয় গুলোর নাম্বারিং পদ্ধতি কেমন হবে তার কোন নির্দেশনা ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া নতুন কারিকুলামে নেই। যা নির্দেশনা আছে তাতে দেখা যায় মাদরাসা শিক্ষা ও স্কুল শিক্ষা এক ও অভিন্ন। এতে আগামীতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রশ্ন আসবে স্কুল এবং মাদ্রাসা শিক্ষা যখন একই রকম সুতরাং সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াবনা স্কুলেই পড়াব। অথবা যারা মাদরাসা শিক্ষাকে ভালবাসে তারা কওমি মাদ্রাসায় চলে যাবে। তখনি মাদ্রাসা শিক্ষার ষোলকলা পূর্ণ হবে। ধ্বংস হবে মাদ্রাসা শিক্ষা। তৎকালীন বৃটিশদের মোহসেনিয়া মাদরাসা যেমন মোহসীন কলেজ হয়েছে, কলিকাতা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ যেমন খ্রিস্টান হয়েছিল ঠিক তেমনি আগামীর মাদরাসা শিক্ষা এমনি রুপলাভ করবে। মাদরাসা ভবিষ্যৎ কি হবে তা সময়ে বলে দিবে। ইতোমধ্যে মাদরাসা গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থী সংকট শুরু হয়ে গিয়েছে। এবিষয়ে ২০২৪ সালের চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের উদাহারণ দেওয়া যেতে পারে। ঐ কেন্দ্রে দেখা যায় ৫টি মাদ্রাসার মোট আলিম পরীক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ১৫৪ জন,যা গড়ে ৩১ জন প্রায়। আলিমের ফাজিল এবং কামিলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ কি তা সহজে অনুমেয়। এমতাবস্থায় সিদ্ধান্তে আসা দরকার মাদরাসা এদেশে থাকবে কিনা? যদি না থাকে তাহলে এমন হযবরল শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করে দেশের অর্থনীতি এবং অসংখ্য মেধাকে রক্ষা করা হোক নতুবা এ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখলে দেশের বৃহত্তর আলেম সমাজের সাথে মতবিনিময় করে তার স্বকীয়তা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক