বাজার তদারকি জোরদার হোক

5

কয়দিন আগে মূল্যস্ফীতি কমার একটি সুসংবাদ দেশের মানুষকে আশাবাদী করে তুলেছিল। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি থামানোর প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা অত্যন্ত ভিজ্ঞ ও দক্ষ, আশা করা হয়েছিল তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তাঁরা সেই আশা জনগণকে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন জ্বলছেই। মুরগির ডিম থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, শাকসব্জি কোনটির দাম কমছেনা। বরং দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতাই যেন অবশেষে ঠিকে আছে। গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি আমদানি করেও ডিমের দামে লাগাম পরানো যায়নি। আলু আর পিয়ঁজেরও একই অবস্থা। অন্তবতীৃকালনি সরকার সপ্তাহখানেক আগে ভারত থেকে প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার ডিম আমদানি করা হয়েছে। ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাজারের কোথাও ১৪ টাকার নিচে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ জরুরি আমদানির পরও ডিমের দামে কোনো প্রভাবই পড়েনি বাজারে। বাস্তবতা হচ্ছে ডজন প্রতি যে ডিমের দাম কিছুদিন আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা, তার দাম এখন ১৬০-১৬৫ টাকা। একই অবস্থা মুরগির দামেও। সকল প্রকার মুরগির অগ্নিমূল্য। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ টাকা, সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। শুল্ক কমানো হলেও পেঁয়াজ ও আলুর দরে সেই অনুপাতে প্রভাব পড়েনি বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকায়। সমুদ্র ও দেশিয় উৎপাদিত মাছের বাজারও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শাক-সব্জির দামও একই। কেজি প্রতি ৬০-৮০ টাকার কমে কোন তরকারি বাজারে পাওয়া যাবেনা। অপরদিকে চালের দামও কেজিতে ২টাকা থেকে ৪টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাঁচা বাজারসহ নিতপণ্যের দর নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে। বিগত সরকারের আমলে কথিত সিন্ডিকেটের নামে অসাধু ব্যবসায়িরা নিত্যপণ্যের বাজার উত্তপ্ত করে রাখতেন। প্রভাবশালীদেও হস্তক্ষেপে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয়া অনেক পদক্ষেপ মাঠেই মারা যেতে আমরা দেখেছি। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসবে, সিন্ডিকেট নামক অদৃশ্য শক্তির প্রতিযোগিতা থামবে-এমনটি আশা করা অবান্তর ছিল না, কিন্তু দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেই না। পণ্য উৎপাদন, পরিবহন, মজুত, আমদানি, সরবরাহ, বিক্রি প্রভৃতি স্তরে নানা গলদ দৃশ্যমান হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব গলদ মনুষ্যসৃষ্ট। গলদগুলো চিহ্নিত করে শক্ত হাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া না গেলে মানুষের ভোগান্তি দূর করা কঠিন হবে।
অবশ্যই স্বীকার করতে হয় যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দ্রব্যমূল্য কমাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তার সুফল কেন মিলছে না সেটা একটা বড় প্রশ্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে পরিমাণ ডিম আমদানি করা হয়েছে সেটা অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় সামান্য। এটা দিয়ে ডিমের বাজারে চাহিদা-জোগানে ভারসাম্য আনা কঠিন। আবার কোনো পণ্য আমদানির সময় দেশীয় উদ্যোক্তাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে। দেশীয় উদ্যোক্তরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে চাহিদা আর উৎপাদন কত সেটা জানতে হবে। বাজার গবেষণার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
দাম কমানোর লক্ষ্যে আলু ও পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। আলু আমদানিতে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আলু আমদানিতে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু পণ্য দুটির দাম কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু শুল্ক কমালেই হবে না, বাজার মনিটরিংও জোরদার করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, মনটিরংয়ের অভাবে শুল্ক কমানোর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে তদারকি জোরদার করতে হবে। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। জনপ্রত্যাশার সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আরো দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হবেন-এমনটি প্রত্যাশা দেশবাসীর।