বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও দেশের সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা আশাব্যঞ্জক

8

অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা ঢলে বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অর্ধ কোটি মানুষ। ১১ জেলায় পানিবন্দি প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন, বিভিন্ন পেশাজীবীসহ দেশ-বিদেশের সাধারণ জনগণ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতে মনে হয় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশ ও জাতি পুনরায় এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। বর্তমানে ভারী বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সরকার ও দেশের সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে বন্যা দুর্গতদের কল্যাণে কাজ করছে তাতে আমরা সম্পূর্ণ আশাবাদী। বন্যায় সর্বশেষ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৫ জন মারা গেছেন। যাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, দুজন নারী। কুমিল্লায় চারজন, চট্টগ্রামে চারজন, কক্সবাজারে তিনজন, ফেনীতে একজন, নোয়াখালীতে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ও লক্ষীপুরে একজন।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানায়, ১১ জেলায় (ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষীপুর ও কক্সবাজার) মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। ৭৭ উপজেলা বন্যাপ্লাবিত এবং ৫৮৯টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মোট তিন হাজার ১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট এক লাখ ১৫ হাজার ৩০ জন লোক এবং ১৮ হাজার ৯৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মোট ৬৩৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১ জেলায় দুর্গতদের মাঝে বিতরণের জন্য নগদ তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল এবং ১৫ হাজার বস্তা শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ-সামগ্রী মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ও সচিব বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বন্যা উপদ্রæত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বর্তমানে উপদ্রæত এলাকায় অবস্থান করছেন। এদিকে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান পাঠাতে আগ্রহীদের স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগ্রহীদের সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ‘প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ নামের অ্যাকাউন্টে (হিসাব নম্বর : ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩) অনুদান পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎহীন ১১ লাখ গ্রাহক বন্যাকবলিত এলাকায় প্রায় ১১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারে বলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।
দেশের চলমান বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ওঠায়, বৈদ্যুতিক মিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ও খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে আরও এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়তে পারে। এখন পর্যন্ত আরইবির আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সাত কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আকাশ কুসুম বড়ুয়া বলেন, ১৩টি সাবস্টেশনের সবকটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চার লাখ ৪১ হাজার ৫৪৬ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় আড়াই লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমাদের অফিসের ভিতরেও কোমর সমান পানি। পানি নেমে গেলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় এদেশের মানুষ সাহস হারায় না। এবারের বন্যায়ও দেশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে ইনশাহ আল্লাহ ।