নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার কঠোরতা জরুরি

9

রতন কুমার তুরী

অদ্ভুত আমাদের এ মাতৃভূমি। সরকারি কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই যেনো বাজার ব্যবস্থা লাগামহীনভাবে এগিয়ে চলেছে। এখানে কোনো অর্থনীতিক নিয়ম ছাড়াই বাজার দর নিমিষেই ওঠানামা করে। কখনও পরিবহনের দোহায়, কখনও বাজারে দ্রব্যের কম সাপ্লাই, আবার কখনওবা যে কোনো ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে এ দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারকে অস্থির করে তোলে। এ ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থা নিয়মিত মনিটরিং এর কথা বারবার বলা হলেও লোকবল এবং কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না। অন্যদিকে লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা সম্ভব না হওয়ার সুযোগ নেয় বেশকিছু ব্যবসায়ী। তারা বিভিন্ন সময় বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেয়। মোটকথা কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এদেশের বাজারের দ্রব্যসমূহের দাম ওঠানামা করে হরহামেশাই। বর্তমানে বাজারে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে জনমনে অস্বস্তি বিরাজ করছে। মুরগীর মাংশ, ডিম, সবজি, চাল, পেয়াজ, রসুন, আদা এসবকিছু দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরীব এবং মধ্যবিত্তদের একটি বিরাট অংশ দুর্ভোগে পড়েছে। বিশেষ করে আলুর দাম একলাফে ৬০ টাকা হয়ে যাওয়ায় গরীব এবং মধ্যবিত্তরা পড়েছে চরম বিপদে। কারণ পৃথিবীর দেশে দেশে এ জনপ্রিয় সবজিটি তরকারি হিসেবে সবসময় মানুষ পছন্দ করে। আমাদের দেশে আলুর জনপ্রিয়তা সর্বজন বিদিত। এ আলু যখন প্রথমে ২০, তারপর ৪০, তারপর ৫০ এবং বর্তমানে ৬০ টাকা দাম হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ আসলে কার হাতে। বাজারের জিনিসপত্রের দাম এমন দফায় দফায় বাড়ছে কাদের কারসাজিতে?

বিষয়টি দেখা যাদের দায়িত্ব তারাইবা কী করছে?
অনেকেই আবার পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন এ বাজার অস্থিরতার পেছনে কেউ কারসাজি করছে নাতো? ২০ টাকার আলু যখন ৬০ টাকা হয়ে যায়, ১২০ টাকার মুরগী যখন ২০০ টাকা হয়ে যায় এভাবে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে তখন জনগণের মনে এমন প্রশ্ন আসা অস্বাভাবিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণ কী তা দ্রুত খুঁজে বের করে জনগণকে জানানো। আর এ মূল্য বৃদ্ধি যদি অযৌক্তিক হয় এবং এর পেছনে যদি কোনো সিন্ডিকেট জড়িত থাকে তাহলে তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের হাতে তুলে দেয়া। কিন্তু আমরা একটা বিষয় সবসময় লক্ষ্য করেছি বাজারে যখন জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি ঘটে প্রথমদিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো হুশ না থাকলেও বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের পর তাদের কিছুটা হুশ আসে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় বাজার মনিটরিং করে কিছু ব্যবসায়ীদের আর্থিক দন্ডও দেয়। তারপর হঠাৎ করে তারা উধাও হয়ে যায়। এ বিষয়ে তাদের সবসময় একই কথা লোকবলের অভাবে তারা তাদের মনিটরিং ব্যবস্থা সবসময় সব জায়গায় কার্যকরি রাখতে পারছেনা। কিন্তু স্বাধীনতার এতো বছর পরও কেনোইবা আমরা বাজার মনিটরিং এর জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ দিতে পারলামনা এমন প্রশ্ন থেকেই যায় যেহেতু আমাদের বাজারে ঘাবটি মেরে বসে আছে অসংখ্য অসাধু ব্যবসায়ী, আড়তদার, মজুমদার এবং মধ্যসত্ত¡ভোগী তাদের থামানো কী যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত নয় ? আর এর জন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাটিকে স্থায়ী রূপ দিলে কারো কী ক্ষতি হবে ? বরং লাভ হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ সংস্থাটি যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবে। এতে করে সরকারও কিছুটা হালকা হবে। বাজার নিয়ে তাদেরকে মাথা ঘামাতে হবেনা। একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী লোভী এরা অধিক মুনাফা করতে সবসময় অভ্যস্ত। হোক সেটা ক্রেতা সাধারণকে ঠকিয়ে কিংবা পণ্যে কিছু ভেজাল কিছু মিশিয়ে। অতীতেও এটা বারবার প্রমাণিতও হয়েছে ফলে এদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত কোনো স্থায়ি সংস্থা না থাকলে এদের নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হবে। ফলে সময় এসেছে বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী এবং দক্ষ ও নির্লোভ সংস্থা গঠন করার। এতেই বাজারে দ্রব্যের মূল্য সমূহ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সুবিধা হবে। এতে যদি নতুন আইনও করতে হয় তাহলেও যেনো সরকার পিছপা না হয়। প্রয়োজনবোধে কঠিন এবং কার্যকরি আইন করার মাধ্যমে বাজার মনিটরিং সংস্থাকে এ বিষয়ে যথাযথ ক্ষমতা দিয়ে বাজারে নামাতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং স্থায়ী মনিটরিং সংস্থার মূল কাজ হবে দেশের প্রতিটি বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা এবং কোথাও অসঙ্গতি দেখলে এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একটি স্থায়ী ‘বাজার মনিটরিং সংস্থা’ গঠন করার মাধ্যমে দেশের বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকরি পন্থা সরকারের হাতে থাকবে এতে করে জনগণ লাভবান হবে। স্থায়ী মনিটরিং সংস্থা গঠন করা হলে পুরো দেশব্যাপী বাজার মনিটরিং সংস্থাটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবেনা। আমরা প্রত্যাশা করবো সরকার খুব দ্রুতই দেশের অস্থির বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি স্থায়ী বাজার মনিটরিং সংস্থাসহ আরো কিছু কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে দেশের বাজার ব্যবস্থাকে একটি সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর এতে দেশের জনগণ লাভবান হওয়ার সাথে সাথে সরকারও তাদের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবে।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক