তৈলারদ্বীপ সেতু টোলমুক্ত রাখার দাবিতে স্মারকলিপি

2

বাঁশখালী প্রতিনিধি

সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত বাঁশখালীর তৈলারদ্বীপ সেতু টোলমুক্ত রাখতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সড়ক বিভাগ এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ ও স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
সাঙ্গু নদীর উপর আরো ৪টি সেতু থাকলেও ওই সব সেতুতে টোল আদায় হয় না। ব্যতিক্রম শুধু বাঁশখালীর তৈলারদ্বীপ সেতুর বেলায়। সাঙ্গু নদীর অপরাপর দোহাজারী সেতু, চন্দনাইশ সেতু, ডলুখাল সেতু, খোদারহাট সেতুসহ অপরাপর সেতুগুলো টোলমুক্ত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বাঁশখালীতে যাতায়াত করতে হয় টোল দিয়ে। বিষয়টি অত্যন্ত বৈষম্যমূলক এবং অযৌক্তিক দাবি করে অতিদ্রæত টোলপ্রথা বাতিল করে তা টোলমুক্ত করার দাবি জানান উপজেলাবাসী।
বাঁশখালী-আনোয়ারা সীমান্তবর্তী শঙ্খ নদীর উপর ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন। মূলত; সেই থেকেই সেতুটি টোল মুক্ত রাখার দাবি উঠে। তৈলারদ্বীপ সেতু স্থায়ীভাবে টোলমুক্ত রাখার দাবিতে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে ছাত্র-জনতা, সামাজিক, রাজনৈতিক, মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বাঁশখালী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার সর্বসাধারণ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তৈলারদ্বীপ সেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করে ছাত্র-জনতা। এসময় টোলঘর ভাঙচুর ও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর থেকেই বন্ধ রয়েছে টোল উত্তোলন কার্যক্রম।
এদিকে ইজারাদার আবারো সেতুটিতে টোল উত্তোলনের প্রস্তুতি নিলে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। সেতুতে টোল প্রথার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ছাত্র-জনতার রক্তার্জিত বিপ্লবী বিজয় বিঘিœত হবে শুধু তাই নয়, বরং চরম বৈষম্যের শিকার হতে পারে সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, সেতুটিতে ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় টোল উত্তোলন। তিন বছরে নির্মাণ খরচ উঠলেও প্রতি তিন বছর পরপর ইজারা তথা টেন্ডার প্রক্রিয়ানীতি অবলম্বন করে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে টোল আদায় চলছে অনৈতিকভাবে ও অযৌক্তিকভাবে। ইজারা তথা টেন্ডারনীতি অবলম্বন করে টোল উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে এলেও নির্মাণ পরবর্তী সময় থেকে এই সেতুর দৃশ্যমান কোনো মেরামত কাজ করতে দেখা যায়নি। আইন কানুনের তোয়াক্কা করতোনা টেন্ডার পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন, সরকার নির্ধারিত নীতিমালা না মেনেই তাদের ইচ্ছে মতো আদায় করতো টোল।
সর্বশেষ প্রায় ৩৩ কোটি টাকায় ৩ বছরের ইজারা পায় জে কে ট্রেডিং নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তারা নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে দিনের পর দিন নিজেদের ইচ্ছেমতো টোল আদায় করেছে। কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত তালিকা বহিভর্‚ত ইচ্ছে মতো টোল আদায়ের অসংখ্য অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
মানবাধিকার ও সমাজকর্মী মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন জানান, সাঙ্গু নদীর ওপর তৈলারদ্বীপ সেতু ছাড়াও আরো ৪টি সেতু আছে। সেতুগুলো তৈলারদ্বীপ সেতুর চেয়ে অনেক বড়। ওইসব সেতু টোলমুক্ত থাকলেও একমাত্র তৈলারদ্বীপ সেতুতেই দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত টোল আদায় করা হয়। যা সম্পূর্ণ জনস্বার্থ পরিপন্থী নীতি হিসেবে বিবেচিত।
এ সেতুতে কোনো টোল আরোপের সুযোগ না থাকা সত্বেও টোল নীতি চলমান রাখার ফলে সেতুটি টোলমুক্তকরণের আবেদনে জনসাধারণের পক্ষে দায়ের করা রিট মামলা পরিচালনা করেন সাবেক এটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ। ওই রিট মামলাটি বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং এটিএম সাইদুর রহমানের বেঞ্চ ২০১৭-১৮ সালের জন্য সেতুটির ইজারা প্রদান তথা টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন। একই সাথে ওইবছরের ২০ ফেব্রæয়ারি দেয়া আদেশে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও তাও মানা হয়নি।
সাবেক ছাত্রনেতা শাহনেওয়াজ চৌধুরী জানান, বাঁশখালী ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার সর্বসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি তৈলারদ্বীপ সেতুতে টোলমুক্ত করা। কিন্তু আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের আমলে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে সেতুতে টোল বাণিজ্য করে আসছিল।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার জানান, তৈলারদ্বীপ সেতু টোলমুক্ত রাখতে স্মারকলিপি পেয়েছি। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।