তুলি-মাটিতে প্রতিমা বানানোয় ব্যস্ত শিল্পীরা

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

শরতের কাশফুল জানান দিচ্ছে আসছে মাসে দুর্গাপূজা। বাকিমাত্র ২৫দিন। ঘরে ঘরে দেবীদুর্গার আগমনী বার্তা। ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। শেষ হবে ১৩ অক্টোবর। পূজাকে উপলক্ষ করে শহরগ্রামে প্রতিমা বানানোর ধুম পড়েছে। বাঁশ, খড়ের কাঠামোতে তুলি-মাটির শৈল্পিক কারুকার্যে প্রাণ ফিরছে প্রতিমার। মহালয়ার আগেই রঙের ছোঁয়ায় রঙিন হবে প্রতিমা। প্রতিটি প্রতিমালয়ে দেবীদুর্গার অবয়ব আনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। নানা সংকটেও বাধা হতে পারেনি মৃৎশিল্পীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, এনায়েতবাজার, সদরঘাট, গোয়ালপাড়া, হাজারী লেন, রাজাপুকুর লেন, চকবাজারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিমালয়ে কর্মব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। দম ফেলার ফুসরত নেই শিল্পীদের। বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ো তোলা হচ্ছে দেবীদুর্গার অবয়ব। প্রতিমায় তুলির নিপুন পরশে কাদা-মাটির লেপন পড়ছে। এখনো রঙের কাজ শুরু হয়নি। রঙের কাজ শুরু হবে আরও ১৫দিন পর। রঙের কাজ শেষেই কাপড় ও অলঙ্কারাদিতে প্রকৃত অবয়ব ফুটবে দেবীর।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, দুর্গাপূজার জন্য একটা পুরো সেট প্রতিমা বানাতে পাঁচ থেকে ছয় শিল্পীর অন্তত ১৫ দিন সময় লাগে। অন্যান্য বছর প্রতিমালয়গুলোতে ১০-১৫টি প্রতিমার অর্ডার পড়লেও এবার তা হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে গ্রামেই প্রতিমা বানানো হচ্ছে। যে প্রতিমাগুলো অর্ডার হয়েছে সেগুলোর মাটির কাজ প্রায় শেষ।মহালয়ার আগেই রঙের কাজ শেষ হবে। এরপরেই সাজসজ্জার কাজ করে প্রতিমা মন্ডপে পাঠানো হবে। মহালয়ার পরপরেই মন্ডপে প্রতিমা নেয়া শুরু হবে।
নগরীর সদরঘাটে ছয়টি স্থানে প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানেই বাসুদেব পাল ও মহাদেব পালের ভাড়া করা প্রতিমালয়ে বানানো হচ্ছে মাটির প্রতিমা। সেখানে কর্মরত শিল্পীরা বলেন, ‘বাপ-দাদার উত্তোরাধিকার সূত্রে পাওয়া পেশাকে আগলে ধরে প্রতিমা বানানোর কাজ হচ্ছে। আগের মতো প্রতিমা বানানোয় লাভ নেই। আগে কর্ণফুলীর মাটি এনে প্রতিমা বানানো হতো। এখন সেই মাটিও কিনতে হয়। খড়ও কিনতে হয়। সবকিছু কিনেই প্রতিমা বানাতে হয়। তাই লাভও কমেছে।’
পাশেই আরেকটি ভবনের নিচে অমল পালের প্রতিমালয়। তিনি বলেন, প্রতিমার অর্ডার প্রতিবছর পাই। কিন্তু ব্যবসায় তেমন লাভ নেই। অধিকাংশ মন্ডপ কমিটি একই রেটে প্রতিমা বানাতে চায়। অথচ প্রতিবছরই জিনিসের দাম বাড়ছে।
শহরে কাজ কমেছে তাই বাঁশখালী পৌরসভায় গিয়ে প্রতিমালয় বানিয়েছেন গোকূল পাল। তিনি বলেন, তার প্রতিমালয়ে এবার আটটি প্রতিমার অর্ডার হয়েছে। এছাড়াও পাশ^বর্তী কয়েকটি উপজেলায় গিয়ে আরও তিনটি প্রতিমা বানাচ্ছেন। প্রতিটি প্রতিমা বানাতে নিচ্ছেন ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা।
গেল বছর চট্টগ্রাম মহানগরে ২৯৩টি ও ১৫ উপজেলায় এক হাজার ৬৫১টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। এবারও প্রতিটি মন্ডপে পূজার আয়োজন চলছে। ইতোমধ্যে পূজার নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের দেয়া নির্দেশনা মেনেই প্রতিটি মন্ডপে পূজা হবে বলে জানিয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টচার্য্য বলেন, ‘প্রতিবছর দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করে। ইতোমধ্যে আসন্ন পূজাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় আয়োজন চলছে। সরকারের নির্দেশনা মেনেই পূজার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করতে মন্ডপগুলোকে অনুরোধ জানানো হবে।’