তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ আবেদন

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি এই রিভিউ আবেদন করেছেন। অন্য আবেদনকারীরা হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। খবর বিডিনিউজের।
তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শরীফ ভূঁইয়া এ আবেদন জমা দেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ছুটির পর অক্টোবরে শুনানির জন্য সময় চাইবেন তারা। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন হলেও তখন বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
পরে বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধই থাকে। হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন রিটকারীরা।
২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পরে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দেন।
তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।
ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন।
ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
সম্প্রতি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়েও একটি রিট আবেদন করেছেন বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর রায়ের বেঞ্চ গত ১৯ আগস্ট এ বিষয়ে রুল জারি করে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
এবার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে আবেদন (রিভিউ) করা হল।