‘গুমের শিকার’ মোস্তাকের ফেরার অপেক্ষায় মা

3

দশ বছর আগে সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে থেকে ‘গুমের শিকার’ হন কক্সবাজারের টেকনাফের মোস্তাক আহমেদ। পরিবারের দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়। পরের দিন স্বজনরা বিষয়টি জানার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরনা দিয়ে কোনও সন্ধান পাননি। মোস্তাক আহমেদের মা আমেনা খাতুন এখনও ছেলের ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তার বিশ্বাস, একদিন মোস্তাক ফিরবেন।
মোস্তাক কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বড় ছেলে। ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট রাতে নিজ বাড়ির সামনে থেকে মোস্তাককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কয়েকজন লোক অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায় বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন। তারা জানান, অপহরণকারীরা মোস্তাককে গাড়িতে তুলে নিয়ে কক্সবাজারের দিকে চলে যায়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
গতকাল রোববার বিকালে টেকনাফ পৌরসভার পুরান পল্লান পাড়ার বাড়িতে কথা হয় আমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরে আসার খবর পাই। স¤প্রতি আয়নাঘর থেকে গুম হওয়া লোকজন ফেরার কথা শুনেছি। এসব শুনে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা জাগে। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর ১০ বছর পার হয়ে গেছে। এখনও তার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকি। আমার বিশ্বাস, ছেলে বেঁচে আছে, একদিন ফিরে আসবে।
ছেলের স্মৃতিচারণ করে অশ্রæভেজা চোখে আমেনা খাতুন বলেন, বিয়ের চার মাস পর ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমার ছেলে কোনও খারাপ কাজে জড়িত ছিল না। এলাকাজুড়ে তার অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। হিন্দু-মুসলিম সবাই আমার মোস্তাককে ভালোবাসে। তার জন্য এখনও এলাকার লোকজন কান্নাকাটি করে। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি, কোনও খবর পাইনি। ড. ইউনূসের সরকার আসার পর আয়না ঘর থেকে গুম হওয়া লোকজন বেরিয়ে আসছে। আমার ছেলেও ফিরবে, বিশ্বাস আমার।
আর কেউ নেই, মোস্তাক তার একটি মাত্র সন্তান উল্লেখ করে আমেনা বলেন, আমার বিশ্বাস, দেশে অনেক আয়নাঘরের মতো গুমের ঘর রয়েছে, সেখানে আমার ছেলে থাকবে। আমার মন বলছে, সে এখনও বেঁচে আছে। বর্তমান সরকার সহযোগিতা করলে আমার ছেলেও ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, মোস্তাকের বাবা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। হয়তো এ কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ছেলের ফোনের লোকেশন ছিল কুমিল্লার লাকসামে। সরকার বদল হওয়ার পর আস্তে আস্তে গুম হওয়া লোকজন ফিরে আসছে। আরও অনেক গুম ঘর আছে, সেখানে খোঁজ নিলে আমার ছেলেসহ গুম হওয়া অনেক মায়ের সন্তান ফিরে আসবে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, এমন একটা দিন আসবে, ছেলে ফিরে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করবে। আর আমাকে বলবে, মা আমি ফিরে এসেছি।