খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

3

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ভয়াবহ বন্যার কবলে পুরো খাগড়াছড়ি। প্রায় ৩০হাজার মানুষ পানিবন্দি। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দীঘিনালায় অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৩০হাজারও বেশী মানুষ পানিবন্দি রয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সাথে রাঙামাটির সাজেক ও লংগদু সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এর আগে বিকেল থেকে জেলা সদর, দীঘিনালার মাইনী ও চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যার পর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে বসতবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু স্থান ও আত্মীয় স্বজনের বাসায় ছুটতে থাকেন।
গত মঙ্গলবার রাতে জেলা সদরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় জেলা বিএনপিরউদ্যোগে রান্না করা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। এর আগে বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ হয়।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে অধিকাংশ খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক। ফলে সাজেকে আটকা পড়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক পর্যটক। দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের এখনো পায় পানি নিচে।
গত মঙ্গলবার(২০ আগস্ট) বিকাল থেকে কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ সাজেক সড়কের একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, ‘সাজেক সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত: ২৫০জন পর্যটক।
এদিকে দীঘিনালার কবাখালিতে আটকা পড়া পর্যটক আমিনুল ইসলাম ও ওয়াহিদ কবির বলেন, আমরা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছি। বন্যার খবর জানতাম না। এখন আটকা পড়েছি। সড়কের দুই তিন জায়গায় পানি উঠেছে। এতো দূর বাইক জার্নি করে আসার পর সাজেক যেতে পারছি না। গতকাল (বুধবার) দীঘিনালায় অবস্থান করব। পানি কমলে সাজেক যাব।’
অপরদিকে খাগড়াছড়ির বুক দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। শহরতলীর এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও কয়েক দফা বন্যায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ এখনো কমেনি।
মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে টানা বর্ষণে ৪দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের অর্পণা চৌধুরী পাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, কালাডেবা, মুসলিম পাড়া, আরামবাগ, শান্তিনগর, বাস টার্মিনাল, মেহেদী বাগ, বটতলী, টিটিসি এলাকা, গঞ্জপাড়া, ঠাকুরছড়া, উত্তর ও স্বর্নিভর, কলেজ পাড়া, দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, মাটিরাঙার তবলছড়ি,তাইন্দং, তবলছড়ি, পানছড়ির লোগাং নিম্নাঞ্চল, দীঘিনালার মেরং বাজার, কবাখালী ও রামগড় উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো পরিবার।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য খাগড়াছড়ি পৌরসভার জন্য ১২টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৫০প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৯টি উপজেলার ৪শত মেট্রো-টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলায় ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি এলাকার মানুষদের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়িতে বন্যা দুর্গত এলাকায় জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়ার পক্ষে গত মঙ্গলবার (২০আগস্ট) বিকাল থেকে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ করছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার জানান, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর স্থানীয় বিনা ভোটের জনপ্রতিনিধিরাও পালিয়ে গেছে। ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নির্দেশে জেলা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যেক দুর্গত মানুষে হাতে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে।