ঈদগাঁওয়ের ৫ ইউপিতে নির্বাচন আজ

8

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ৫ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ। ইসলামপুর, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, পোকখালী ও জালালাবাদ- এই ৫ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৮৮ হাজার ৪৫৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৬ ও মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২১২ জন। ৫ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪৭টি, ভোট কক্ষ ২৪১টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৪টি। ইতোমধ্যে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিংসহ ভোট গ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। জেলা প্রশাসনের নিয়োগকৃত দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ রবিবার ঈদগাঁও উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তবে, ঈদগাঁও উপজেলার ইউনিয়নসমূহের প্রথম নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন প্রার্থীরা। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণায় বাঁধা, ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী কর্মী সমর্থকদের হুমকি-ধমকি প্রদানসহ নানা অভিযোগ আসছে। কিছু কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামপুরের ২টি ভোট কেন্দ্রকে ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
টেলিফোন প্রতীকে নির্বাচন করা চেয়ারম্যানপ্রার্থী আব্দুল কাদের মাস্টার জানান, নাপিতখালী উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্ব নাপিতখালী (বামনকাটা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- এই দুই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা বেশি। তাই এই ২ ভোট কেন্দ্রের প্রতি সব প্রার্থীর নজরও বেশি।
কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, পোকখালীতে কেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি নিয়েছেন একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। সিন্ডিকেট রয়েছে মেম্বার প্রার্থীও। সেই লক্ষ্যে প্রশাসন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার মাস্টার প্ল্যান চ‚ড়ান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে তারা।
সূত্রটির মতে, প্রশাসন ম্যানেজ করা না গেলে কেন্দ্র দখলের কাজে ব্যবহার করবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের।
ইসলামাবাদ ইউপি নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলাম জানান, ২, ৭, ৮নং ওয়ার্ডে অবৈধ অস্ত্রধারীদের ব্যবহার করে কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা নিয়েছে একজন প্রার্থী। ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও জনগণ ভোট দিতে না পারলে বড় ধরণের সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, কোনো কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের।
নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়ে ঈদগাঁও থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, প্রত্যেক ইউনিয়নের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পর্যাপ্ত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। যেসব কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা বেশি সেখানে আলাদা নজরদারি থাকবে।
তিনি জানান, ইসলামপুরের নাপিতখালী উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৫ ইউনিয়নের বেশ কিছু ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব এলাকায় সন্ত্রাসী ও বহিরাগতদের ব্যাপারে কঠোর হবে প্রশাসন। ভোটকেন্দ্রে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে জানান ওসি।
দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না এবারের ইউপি নির্বাচন। তাই প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যাতে কেউ দলীয় প্রভাব বিস্তার করতে না পারে; জনমতের প্রতিফলন ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা সবার।
উল্লেখ্য, আজ উপজেলার ৫ ইউপিতে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরই নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার প্রথম উপজেলা নির্বাচনও আগামি ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। তাই এ নির্বাচন শেষ না হতেই জনগণ উপজেলা নির্বাচনের ভোট যুদ্ধের স্বাদও পাবে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে ফেলেছেন। অবশিষ্ট রয়েছে আপিল নিষ্পত্তি ও প্রতীক বিতরণ। মে মাসের শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাচনের ভোট যুদ্ধও শুরু হয়ে যাবে।