‘জুলাই গণহত্যায়’ শহীদ ৪২২ জনই বিএনপির সরকারকে সহযোগিতার আহবান

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির কমপক্ষে ৪২২ জন মারা গেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত পুরো বাংলাদেশে ৮৭৫ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সকল শ্রেণি-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এই বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতাকর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
গতকাল রোববার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল। খবর বিডিনিউজের।
প্রশাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় অতি শিগগির সংস্কার কাজ শেষ করে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন নিরপেক্ষ নির্বাচনে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য সরকারকে সবাইকে সহযোগিতা করার আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, সংস্কার কাজে তারা হাত দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই কাজগুলো দরকার। এই কাজগুলো অতিদ্রুত শেষ করে একটা নির্বাচনের দিকে যাওয়া দরকার। যে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে এবং জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। ধৈর্য এবং সহনশীলতার সঙ্গে তাদের সহযোগিতা করতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে অবসানের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার এক মাস সময়ের বেশি সময় পার করেছে।
সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো, অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এগুলোর সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। আর অন্যান্য সংস্কার যেগুলো আছে, সেটা যে সরকার জনগণের ভোটে আসবে, তারা করবেন।
এ সময় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো রাষ্ট্র মেরামতে প্রণীত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব। প্রশাসনে রদবদল চলমান থাকলেও মির্জা ফখরুল মনে করেন প্রশাসন এখন পর্যন্ত ‘ফ্যাসিবাদ’ মুক্ত হয়নি।
এখানে আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হল ঐক্য অটুট রাখা, ধৈর্য রাখা, এই সরকারের সমস্ত কাজকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার।
সমমনা দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি একটু খোলামেলা বলছি যে, অনেক সময় দেখা যায় যে, অত্যন্ত দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলেরা তারা এমন এমন কথা বলেছেন যে, যেটা সামগ্রিক ঐক্যের জন্য উপযোগী নয়। এটা একটা সমস্যা।
এছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসরদের ‘ইন্ধনে’ দেশের শিল্পঞ্চলগুলোয় অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ফখরুল।
দেশে হঠাৎ করে শিল্প শ্রমিকদের মধ্যে যে অসন্তোষের প্রকাশ ঘটেছে তার পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন বলেও জানিয়েছেন বিএনপির ওই নেতা।
তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টগুলোতে যে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, এই পর্যন্ত সুস্পষ্ট যে, এতে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরই ইঙ্গিত আছে। এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যে, একটা চক্রান্ত চলছে।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফখরুল বলেন, সোশাল মিডিয়ায়, তারপর আপনাদের কাছে থেকে শুনে-টুনে যা বুঝি যে, সীমান্তের ওপার থেকে কথিত ফ্যাসিবাদী হাসিনার অডিও-টডিও ফাঁস করে দেওয়া হয়, যেগুলোতে বিভ্রান্তিকর খবর থাকে।
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপরে ঘটে যাওয়া হামলার ঘটনাকে ‘টোটালি বাকোয়াজ’ বর্ণনা করে ফখরুল বলেন, প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে যারা ধর্মীয়সংখ্যালঘু তাদের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যেটা একেবারে ঠিক নয়। এটা আমরা শুধু নয়, ভারত থেকে যে সমস্ত সাংবাদিকরা এসেছিলেন তারা পর্যন্ত দেখে গেছেন, তারা রিপোর্ট করেছেন যেটা বলা হচ্ছে সেটা সঠিক নয়।

বিএনপি সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা নয় : বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ‘মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ উল্লেখ করে সোশাল মিডিয়ায় চলমান কথাটি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। এটা কিন্তু যারা দুষ্টু, যারা সবসময় ফয়দা লুটতে চায়, তারা বলে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ তুলনা হতেই পারে না।
কারণ আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, গণবিরোধী একটা দল। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণতান্ত্রিক মানুষকে হত্যাকারী একটি দল। আর বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রকে জীবন্ত করার দল।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা, অবদান এবং প্রত্যাশার শীর্ষক শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।