প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা জরুরি

2

মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার কারণে লাগাতার মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে চট্টগ্রামে। গত শুক্রবার সারাদিন থেমে থেকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এতে নগরীর অনেক নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এমন বৃষ্টিপাত শনিবারও সারাদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সেই সঙ্গে ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ধস কিংবা ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গত শুক্রবার সকাল ৯টার পর থেকে বাড়তে থাকে বৃষ্টির দাপট। এ কারণে নগরবাসীকে পোহাতে হয়েছে জলাবদ্ধতার ভোগান্তিও। অবশ্য হালকা বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে এ শহরের মানুষজন। একইসাথে অতি ভারি বৃষ্টির কারণে সমুদ্র বন্দরগুলোকে দেওয়া ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।
এদিকে, সকাল থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় নগরের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে এবং অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব বলেন, বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বহির্নোঙর ও জেটিতে থাকা জাহাজগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
অপরদিকে কক্সবাজারে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে বলে দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদন হতে জানা যায়। পাহাড়ধসে দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু খবরও এসেছে পত্রিকায়। ভাদ্রের শেষ সময়ে কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে, যা দুই দশকের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এই অতি ভারী বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ধস কেড়েছে ছয়জনের প্রাণ। ডুবেছে পর্যটন নগরীর হোটেল-মোটেল; পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় একশ গ্রাম।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে। এর আগে ২০০১ সালের ১৪ জুন সর্বোচ্চ ৫৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল সন্দ্বীপে। সেই হিসাবে দুই দশকের মধ্যে কক্সবাজারে শুক্রবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর গত বছরের ৬ অক্টোবর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝড়ে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে। গত শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। সেটি বিকাল ৩টায় নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কারণে আবহাওয়াবিদ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে অতি ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রধান সড়কসহ শহরের ৫০টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়েছে মালামাল; বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। পর্যটন জোন কলাতলীর সব সড়ক, সৈকতসংলগ্ন এলাকা আর বাজার ডুবে আছে পানিতে। কলাতলী সড়কের দুই পাশের পাঁচ শতাধিক হোটেলে যাতায়াতের ২০টি উপসড়কও ডুবেছে। তাতে করে কয়েক হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষই বন্দি হয়ে পড়েছেন। শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ। পানিবন্দি মানুষকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ চলছে। পানিবন্দি এলাকার তালিকা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনের বারবার সতর্কতার পরও পাহাড়ি এলাকায় যারা বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে তাদের অবহেলা জনিত কারণে পাহাড়ধসে ৬ জনের মৃত্যু হয়। প্রশাসনের নির্দেশাবলী মেনে সতর্ক থাকলে পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না। বন্যা, ঝড়-বৃষ্টিতে জনগণকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা মেনে চলতে হবে। জনগণ সচেতন হলে জান-মালের ক্ষতি হতে অনেকখানি নিরাপদ থাকা সম্ভব।