৮ দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের সমাবেশ

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশব্যাপী মন্দির, হিন্দু বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ, খুলনায় উৎসব মন্ডলের ওপর বিচারবহির্ভ‚ত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড . মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে উত্থাপিত ৮ দফা দ্রুত বাস্তবায়নে দাবি জানানো হয়। গতকাল শুক্রবার বিকালে নগরীর জামালখান মোড়ে সম্মিলিত সনাতনী সমাজ-বাংলাদেশ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও ওয়ার্ড থেকে সনাতনীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সনাতনী সমাজ-বাংলাদেশের অন্যতম মুখপাত্র ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্যবদল হয় না। কোনোকিছু হলেই সনাতনীদের ওপর হামলা হয়। তাদের বাড়িঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়। কিন্তু ৫৩ বছরে এদেশে কোনো সরকার সনাতনীদের হামলার বিচার করেনি। সনাতনীদের ওপর হামলার বিষয়ে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তার কারণে হামলাকারীরা উৎসাহিত হয়। সনাতনীদের সবসময় রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিষয় থেকে সনাতনীরা মুক্তি পেতে চায়। ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের ৪৯টি জেলায় সনাতনীদের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১০৬৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপরও বিভিন্ন স্থানে ঘটনা ঘটেছে। যদিও এর সংখ্যা আরও বেশি। প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি যেন সনাতনীদের জন্য শান্তির একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন সেই আশা করবো আমরা।
বক্তারা আরও বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতনীরা আতংকিত। সুন্দরভাবে সনাতনীদের এই সর্ববৃহৎ উৎসব উদযাপনের জন্য বৃহত্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া দুর্গাপূজায় ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। ঘোষণার বিষয়ে আমরা জানতে চাই। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও বাড়িঘর সরকারিভাবে মেরামত ও সংস্কার করতে হবে। এছাড়া যারা নিহত হয়েছেন তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী একমাস দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, পাড়া ও মহল্লায় ৮ দফা দাবির সমর্থনে গণসংযোগ হবে। দুর্গাপূজার আগে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।

৮ দফা দাবিগুলো হলো: সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রæততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে এবং বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টিকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ। সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের ছুটি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পটিয়া পাচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদাননন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, নন্দনকানন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারণনিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, শ্রীমৎ কৃষ্ণ দাস বাবাজী, শ্রীমৎ স্বরূপ দাস বাবাজী, উজ্জ্বলানন্দ ব্রহ্মচারী, সম্মিলিত সনাতনী সমাজ বাংলাদেশের সমন্বয়ক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, কাঞ্চন আচার্য্য, ডা. যীশুময় দেব, সুব্রত দাশ আকাশ, টিটু শীল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আফসার আহমেদ, উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, বিপ্লব চৌধুরী বিলু প্রমুখ।