উৎপাদন ও অর্থনীতির সাথে পর্যটনের অনন্য মেলবন্ধন

2

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

কর্নফুলী নদীর কোলে সবুজ পাহাড় আর প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সমৃদ্ধ চা বাগানটি উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কোদালা ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী কোদালা চা বাগানের অবস্থান। চা বাগানের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে লুসাই কন্যা কর্তফুলী নদী। কোদালা চা বাগান ১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোদালা চা বাগান বাংলাদেশের প্রথম চা বাগান হিসেবে পরিচিত। পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং ব্রিটিশ বাংলোর সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ছুটছে দর্শনার্থীরা নতুন মালিকানাধীন সিটি গ্রুপের কোদালা চা বাগানে। ব্র্যাক থেকে সিটি গ্রæপ ২০২২ সালে কিনে নেয়। ২০২৪/ ২৫ অর্থ সালের চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেন ৬ লাখ কেজি চা। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রাকুতিকভাবে কোন সমস্যা না হলে বাকি ৩ ল্খা চা উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। ২৪ শত ৮৫ একর সরকার থেকে লিজ নিয়ে চা বাগান পরিচালনা করছে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে লিজের মাধ্যমে এই চা বাগানের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ৭ অক্টোবর ব্র্যাক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতাধীন কোদালা চা বাগান লিজ নেয়। তারা দীর্ঘদিন কোদালা চাবাগান বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করেন। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসে চা বাগানটি ব্র্যাক থেকে সিটি গ্রুপ মালিকানা কিনে নেয়। ২৪ শত ৮৫ একর পাহাড় সমতল জমি সরকার থেকে লিজ নিয়ে চা বাগান পরিচালনা করছে দেশের স্বনামধন্য শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ।
রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান এখন শীর্ষ চা-বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম চা-বাগানে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রথম চা বাগান হিসেবে তার ঐতিহ্য ও গুণগত মান বজায় রেখে সম্ভাবনাময় চা বাগান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। উৎপাদন ছাড়াও চা বাগানটি ইতিমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পর্যটন র্স্পট হিসেবে। চা বাগানে প্রতিদিন ছুটে আসছে শত শত ভ্রমণ পিপাসু। চা বাগানে পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে সার্বিক পরিবেশ। কোদালা চা বাগান ব্যস্ততম এলাকায় পরিণত হয়েছে।
কোদালা চা বাগান সূত্রে জানা যায়, কোদালা চাবাগানে শ্রমিকের সংখ্যা ৬৫০ জন রেজিস্ট্রার্ড এবং ২৮৮ জন মাস্টার রোলে চা বাগানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে। দৈনিক ডাবল হাজিরা ৩শ ৪০টাকা বেতনের পাশাপাশি সপ্তাহে সাড়ে তিন কেজি আটা, শ্রমিকদের শ্রমিক বস্তিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া, চিকিৎসা ভাতা ফ্রি। চা বাগানের ভিতরে কমিউনিটি প্রাইমারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য চা বাগানের ভিতরে এমবিবিএস ডাক্তারদের সমন্বয়ে একটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে চা শ্রমিকদের পরিবার-পরিজন চিকিৎসা নিয়ে থাকে। যা দেশের কোন চা বাগানে দৈনিক শ্রমিকের ডাবল হাজিরা বা অন্যান্য সুবিধা নেই বলে চা বাগান পরিচালনা কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়।
কোদালা চা বাগানের শ্রমিক আশু দাশ জানান, দেশের অন্যান্য চা বাগানের চেয়ে এ বাগানের কর্তৃপক্ষ চা শ্রমিকদের অনেক সুবিধা দেয়। তাদের দেওয়া সুবিধা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়না। আমাদের জীবনজীবিকা উন্নতি করতে চা বাগান কর্র্তৃপক্ষের সব সময় সুদৃষ্টি থাকে।
কোদালা চাবাগানের মহিলা চা শ্রমিক মিনু আকুড়ী (৩৪), আশা বাওড়ী (৩৬), কুসুমা আকুড়ী (৩৭), নিপু রায় (২১), মুন্নি রায় (৩৩), রুমী রায় (৩১) বলেন, চা বাগান ঘিরে আমাদের সব কিছু। আমরা বাগানে ডাবল হাজিরা রেশনসহ নানা সুবিধা পেয়ে আসছি। আমাদের চিকিৎসা শিক্ষা সহ বাগানের কর্তৃপক্ষ সব ব্যবস্থা করে থাকে।
চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো.শাহানাজ বলেন, চা বাগানটি সিটি গ্রুপের কাছে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ব্র্যাক চূড়ান্তভাবে হস্তানান্তর করে। ২৪ শত ৮৫ একর চা বাগান থেকে এ বছর ৬ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর ৫ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, অর্জন হয়েছিল ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮২১ কেজি। গত বছর বৃষ্টিপাত কম ছিল। সেচের অভাবে ৬২ হাজার চারাগাছ মারা গিয়েছিল। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পর্যাপ্ত সেচের অভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। চা বাগানের গতি ফিরিয়ে আনতে সিটি গ্রুপ দায়িত্ব নিয়েছে। এবার প্রকৃতি সহায় থাকলে আশা করি সবার সহযোগিতায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।