‘শহীদি মার্চ’ থেকে পাঁচ দফা দাবি

13

পূর্বদেশ ডেস্ক

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পূর্তির দিনে ‘শহীদি মার্চ’ থেকে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের শপথ পুনঃউচ্চারিত হল ঢাকার রাজপথে। লাখো ছাত্র-জনতার এই শহীদি পদযাত্রায় মুহুর্মুহু ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে মু্ক্তির স্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের স্লোগান। মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণআন্দোলনে নিহত অনেকের নাম।
শহীদদের স্মৃতি উচ্চারণ করে তাদের আত্মত্যাগের মহিমাকে স্লোগানের ভাষায় রূপ দিয়ে রাজপথের উত্তাল জনতা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়ে পায়ের তালে পা রেখে ঢাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ‘শহীদি মার্চ’ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অতিক্রম করে।
এর আগে বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মার্চটি শুরু হয়। পতাকা উড়িয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায় তারা। শহীদদের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুক্ত হয়েছে বহু মানুষ।
এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দেয়, ‘তুমি কে আমি কে/ বাঙালি, বাঙালি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধর রক্ত/ বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাহিরে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে/ রক্তে আগুন লেগেছ ‘, ‘বিচার চাই, বিচার চাই/ খুনি হাসিনার বিচার চাই।’
শিক্ষার্থীরা ‘আমাদের শহীদেরা/ আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘২৪ আমাদের বিশ্বাস’- এ ধরনের নানা স্লোগান দেয়। মিছিলের স্লোগানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করা হয়। তার আমলে হত্যা, গুম-খুনের বিচারের আওয়াজ ওঠে।
শহীদি মার্চে তেজগাঁও কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নূরজাহান বেগম উচ্চ বিদ্যালয়,সরকারি কমার্স কলেজ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, খিলগাঁও মাকজালুল উলুম মাদরাসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
মার্চটি রাজু ভাস্কর্য হয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে নীলক্ষেত হয়ে সায়েন্সল্যাব, কলাবাগান, মানিক মিয়া এভিনিউ (সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে), ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্য দিয়ে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার জানান, শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি থেকে পাঁচটি দাবি জানিয়েছে ছাত্র-জনতা।
দাবিগুলো হলো : এক. গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ২. শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রিত সময়ের মধ্যে প্রদান করতে হবে, ৩. প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ৪. গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করতে হবে; এবং ৫.রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতিরিক্তি বলপ্রয়োগের ফলে শেষপর্যন্ত সরকার পতনের একদফায় রূপ নেয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। পালিয়ে ভারতে চলে যান তিনি।
৮ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, যেখানে জায়গা করে দেওয়া হয় দুজন ছাত্র নেতাকে, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন।