‘আঁধার কাটিয়ে’ পুরো দিনটিই বাংলাদেশের

6

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

সকালেই বাংলাদেশ দলের ড্রেসিং রুমে গুমোটভাব, আঁধারও। ২৬ রানেই নেই ৬ উইকেট। তখন হয়তো সবার ভাবনায় ফলো-অন এড়ানো যায় কি-না। তবে ভাগ্য বদলে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস। পরের জন পেলেন অনবদ্য এক সেঞ্চুরিও। লিড না পেলেও বাংলাদেশ গেল কাছাকাছি, শেষ বিকেলে উইকেট তুলে নিয়ে দিনটি পুরোপুরি নিজেদের করে নিয়েছেন বোলাররা। রাউয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬২ রান করে বাংলাদেশ। ১২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান তৃতীয় দিনশেষে ২ উইকেট হারিয়ে করেছে ৯ রান।
টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ শুরু থেকেই চাপে পড়ে। জাকির হাসান বেঁচে যান আবরার আহমেদ ক্যাচ ধরতে না পারায়। এরপর জাকির আরও একবার সুযোগ পান। মীর হামজার বল জাকিরের প্যাডে লাগে, জোরালো আবেদনও হয়; কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নেয়নি পাকিস্তানও। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, স্টাম্পে আঘাত হানতো বল।
পরের ওভারে এসেই অবশ্য জাকিরের উইকেট তুলে নেন খুররাম শেহজাদ। সেই আবরার আহমেদের হাতেই মিড উইকেট অঞ্চলে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ১ রান করা এই ব্যাটার। পরের ওভারের প্রথম বলে সাদমান ইসলামকে বোল্ড করেন খুররাম।
দুই বল পর একই ভাগ্য বরণ করতে হয় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে। স্রেফ ৫ বলের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে বাংলাদেশকে পাহাড়সম চাপে ফেলে দেন খুররাম।
উইকেটের দেখা পান সকাল থেকে দারুণ বল করা মীর হামজাও। ২ বলে কোনো রান করার আগেই তার লেগ স্টাম্পের বল ফ্লিক করতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দেন মুমিনুল।
অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানও পারেননি দলের হাল ধরতে। ৯ বলে ৩ রান করে মীর হামজার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক। খুররামের বলে এলবিডব্লিউ হন ১০ বলে ২ রান করা সাকিব। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ
এ অবস্থায় ভেঙে পড়াটাই ছিল অনেকটা অনুমিত দৃশ্য। কিন্তু সেটি বদলে দেওয়ার কাজটি করেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের জুটিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর এসে দুজন হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন।
তাদের জুটি দেড়শ ছাড়ালে রেকর্ড গড়ে ফেলে। ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৫০ রানের জুটি হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই। কিন্তু রেকর্ডের রানকে আর খুব বেশি বড় করতে পারেননি মিরাজ। খুররাম শেহজাদের কিছুটা লাফিয়ে উঠা বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দেন তিনি। ১২৪ বলে ৭৮ রান করেন মিরাজ। ভাঙে ১৬৫ রানের জুটি।
এরপর উইকেটে এসে তাসকিন ৫ বলে ১ রান করে এলবিডব্লিউ আউট হন খুররামের পরের ওভারে। এ অবস্থা থেকে আরও একবার দলের হাল ধরেন লিটন, এবার তার সঙ্গী হন হাসান মাহমুদ। লিটন তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে দুই সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও দেখিয়েছেন তিনি।
এরপরও দলকে ধীরে ধীরে লিডের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন। কিন্তু আগা সালমানের বলে লং অনে সায়েম আইয়ুবের হাতে ক্যাচ দিলে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। ২২৮ বলে ১৩টি চার ও চারটি ছক্কায় ১৩৮ রান করা লিটন সাজঘরে ফেরার সময় পান অভিবাদন।
লিটনের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়া হাসান মাহমুদ অপরাজিত থাকেন ৫১ বলে ১৩ রান করে।
শেষ বিকেলে ফের ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। কিন্তু তারা একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। ১০ বলে ৩ রান করে হাসান মাহমুদের ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। এরপর ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে পাঠানো হয় খুুররাম শেহজাদকে। নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে তাকে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ। এরপরই দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। পাকিস্তান চাপে থেকেই সাজঘরে ফেরে।