রাজনৈতিক হানাহানি মাথাচাড়া দিচ্ছে

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক হানাহানি। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় শৈথিল্যের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে খুনোখুনি ও অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ঘনীভূত হচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী হানাহানি বাড়তে থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পূর্বদেশকে বলেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর একশ্রেণির দুর্বৃত্ত ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কাজে নেমে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সময়ে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা সীমিত থাকার সুযোগ নিয়ে অনেকে অপরাধ সংঘটিত করছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসবের লাগাম টেনে ধরা উচিত। না হয় জনমনে ভীতি ও সমাজে অস্থিরতা বেড়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গত ২৫ দিনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে নগরী ও জেলায় চাঞ্চল্যকর জোড়াখুনসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ আগস্ট রাত আটটার দিকে নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় মো. আনিস এবং হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সারকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা দু’জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মী এবং হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুচ গণির অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। নিহতদের পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দলের প্রতিপক্ষের হাতে তাদেরকে নির্মমভাবে খুনের শিকার হতে হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের ঘটনায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী ও জেলার হাটহাজারী থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় দলীয় প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বায়েজিদ-কুয়াইশ সংযোগ সড়কের নাহার গার্ডেনের সামনে গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আনিস নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী শামীমা আক্তার বাদী হয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে এজাহারনামীয় চারজন জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে ওইদিন সন্ধ্যায় হাটহাজারীর কুয়াইশ-বুড়িশ্চর এলাকায় যুবলীগ কর্মী মাসুদ কায়সার খুনের ঘটনায় তার ছোট ভাই বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় অপর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও আট-দশজনকে আসামি করা হয়েছে। যে চারজনের নাম আসামির তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন নগরীর পাঁচলাইশ থানার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত মুহাম্মদ সাজ্জাদ, আরমান, জাহাঙ্গীর ও মো. হাসান। এছাড়াও আরও দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
এদিকে গত শুক্রবার ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট ঝঙ্কার সিনেমা মোড় থেকে চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাশেদ চৌধুরীকে দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ছাত্রশিবির ও জামায়াতের নেতারা। ফটিকছড়ি উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইসমাঈল গনী অভিযোগ করে বলেন, ওইদিন ফটিকছড়ির নাজিরহাটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনের অতিথি হিসেবে রাশেদ চৌধুরী আসেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুনরায় শহরে ফিরে যাওয়ার জন্য নাজিরহাট ঝঙ্কার সিনেমা মোড়ে যান। সেখান থেকে তাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে গেছে। বিষয়টি ফটিকছড়ি থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট জেলার রাউজান থেকে আবদুল মান্নান নামে এক শ্রমিকলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়া সড়ক থেকে শ্রমিক লীগ নেতার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মান্নান রাঙামাটির রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির আহমেদের ছেলে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিহত আবদুল মান্নান বালু ও কংক্রিটের ব্যবসা করতেন। রাজনীতি ও ব্যবসা নিয়ে এলাকায় প্রতিপক্ষের সাথে তার দ্ব›দ্ব ছিল। পূর্ব বিরোধের জেরেই রাঙামাটির বেতবুনিয়া থেকে ধাওয়া করা হয় মান্নানকে। প্রায় দশ কিলোমিটার ধাওয়া করে রাউজানে এনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরিবারকে খবর দিলে নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনরা গিয়ে উদ্ধার করে রাউজানের গহিরায় জে কে মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহত হওয়ার অন্তত ১৩ ঘণ্টা আগে শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আঘাত ভুলে গেলেও আঘাতকারীকে ভোলা যাবে না। কারণ ক্ষত শুকিয়ে গেলেও দাগ কিন্তু মুছে যায় না।’