বিপিসি’র ‘স্বৈরাচার’ সিবিএ নেতাদের পদত্যাগ দাবি

12

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) নেতাদের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, বিটুমিন ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন সিবিএ সদস্য ও বিপিসি কর্মচারীরা। অভিযোগে তারা আরো বলেন, এসব অবৈধ পন্থায় তারা শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না দিয়ে সবকিছু তাদের দখলে রেখে দেয়। এতে করে তৈরি হয়েছে বৈষম্য। বর্তমান কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার এসব অভিযোগ তুলেন বৈষম্যের শিকার সিবিএ সদস্যবৃন্দ ও বিপিসি কর্মচারীরা।
তবে বিপিসির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আতিকুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় সিবিএ অফিসে হামলা করে তিনজন। তখন আমি অফিসে ছিলাম না। হামলাকারীরা হলেন বিপিসির কর্মচারী তুহিন কবির (ইউডিএ), নুরুজ্জামান (গাড়িচালক) ও মো. আসলাম হোসেন। ১৮ থেকে ২০ জন দুর্বৃত্ত বিপিসির সিবিএ অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করে। এ সময় তারা নানা হুমকি-ধমকি দিলে বিপিসির কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিষয়টি আমরা বিপিসির চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। যারা হামলা করেছে তারা আগে সিবিএ’র সদস্য ছিলেন। যদিও উনাদের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো। কিন্তু আদালতে তাদের সদস্যপদ স্থগিত রাখার কারণে আমি কিছু করতে পারছি না। আর তারা বিষয়টিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে চেয়ারম্যানকে আরেকটি চিঠি দিলে সেখানে আমাদের সদস্য নয় এমন (দারোয়ান, প্রহরী) কর্মচারীদের স্বাক্ষর জমা নেন। আর এসব স্বাক্ষরের মধ্যে অনেকেরটা জাল করে বসানো হয়েছে। আর বাকি স্টাফদের নির্বাচনের কথা বলে স্বাক্ষর নিয়েছে।’
এদিকে গত বুধবারের ভাঙচুরের ঘটনাকে মিথ্যা এবং বর্তমান ইউনিয়নকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও দুর্নীতিবাজ দাবি করে অনতিবিলম্বে তা বিলুপ্ত ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার/উপ-পরিষদ গঠন নিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দেন বৈষম্যের শিকার সিবিএ সদস্য ও বিপিসি’র কর্মচারীরা। এতে মো. তুহিন কবির, মো. নুরুজ্জামান, মো. আসলাম হোসেন, মো. আবুল হোসেনসহ প্রায় ৬০ জন সদস্য স্বাক্ষর করেন।
এতে বলা হয়, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য ২০১৬ সালে বর্ণিত ৩ কর্মচারীর নামে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের মামলায় অভিযুক্ত করা হলেও তারা মূলত নির্দোষ। সেটা সাজানো এক মামলা ছিল, পরে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ওই ৩ জনকে ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভ‚ক্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার নির্দেশনা দেন। পরে রাজনৈতিক ব্যানারে থাকা মুজিব কোটধারী মেয়াদত্তীর্ণ ইউনিয়ন ওই রায় পালন করেননি।
এতে বৈষম্যের শিকার সদস্যরা পূর্বের ন্যায় এবারও ইউনিয়ন রুমে নিজেরা ভাঙচুরের ফটোসেশন করে মিথ্যা লিখিত দাখিলকারী ইউনিয়ন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও দুর্নীতিবাজ ইউনিয়নকে অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত ঘোষণা করে অফিস শৃংখলা বজায়ের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার/উপ-পরিষদ গঠন করার জন্য সংস্থার চেয়ারম্যানের নিকট হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সিবিএ’র সাবেক সদস্য এবং বিপিসি’র উচ্চমান সহকারী তুহিন কবির পূর্বদেশকে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে সিবিএ থেকে আমাদের দূরে রাখা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ এনে, শ্রম আদালতে মামলা দিয়ে আমাদের সদস্যপদ বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের দালাল সিবিএ সভাপতি মো. আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হালিমসহ কয়েকজন নেতা। ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে আমাদের পদ ফিরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হলেও তারা আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আমরা এ নিয়ে কয়েকবার কর্তৃপক্ষকে বললেও তাদের পক্ষ থেকেও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। আমিসহ সকল সাধারণ সদস্যদের দাবি, অনতিবিলম্বে এসব দুর্নীতিবাজ মেয়াদোত্তীর্ণ, আওয়ামী সরকারের দালালদের পদত্যাগ চাই।’