বন্যাদুর্গত এলাকায় জনস্বাস্থ্য চরম হুমকিতে

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যায় বসতবাড়ির পাশাপাশি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্লাবিত এলাকার মানুষজন সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে শৌচাগার। এতে মিরসরাই ও ফটিকছড়ির প্রায় ছয় হাজার নলকূপ ও শৌচাগার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষজন। পানি নামার সাথে সাথে দুর্গত এলাকার মানুষজনের বেড়েছে রোগবালাই। বিশেষ করে শিশু ও মহিলারা বড়ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে। পানি পুরোপুরি নামলেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নলকূপ ও শৌচাগার নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র নাথ পূর্বদেশকে বলেন, মিরসরাই ও ফটিকছড়িতে ছাপা কল ও সামমারসিবল নলকূপ মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় চার হাজার নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি দুই হাজার শৌচাগার নষ্ট হয়েছে। সেখানে সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয়ায় আপাতত আমরা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে আরও কি পরিমাণ নলকূপ ও শৌচাগার ক্ষতি হয়েছে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জনস্বাস্থ্য অফিস ও স্থানীয়রা জানান, মিরসরাই উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। সেখানে গত এক সপ্তাহের বন্যায় কাটাছড়া, ইছাখালী, ওসমানপুর, ধুম, করেরহাট, জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলি ইউনিয়নে পানিতে প্লাবিত হয়। সেখানের ১২ ইউনিয়নের দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী ছিল। এখন পানি নামলেও মানুষ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষ করে পানিতে নলকূপ ডুবে থাকায় সুপেয় পানির সংকট ছিল তীব্র।এছাড়াও শৌচাগার নষ্ট হওয়ায় পানি দূষণ হয়েছে। এতে নানাবিধ রোগবালাই দেখা দিয়েছে। মিরসরাইয়ের দুই হাজার নলকূপ ও ৫০০ শৌচাগার নষ্ট হয়েছে। একই অবস্থা ফটিকছড়িতে। এই উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বন্যার পানিতে উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল, পশ্চিম সুয়াবিল, নাজিরহাট পৌরসভা, পাইন্দং, ভুজপুর, হারুয়ালছড়ি, শোভনছড়ি, সমিতির হাট, বাগানবাজার, হেঁয়াকো, নারায়ণহাট ও সুন্দরপুর এলাকার মানুষের বাড়িঘর ডুবে ছিল। এসব ইউনিয়নে ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। কমছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা। এই উপজেলার দুই হাজার নলকূপ ও দেড় হাজার শৌচাগার নষ্ট হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে মেডিকেল টিম করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।
মিরসরাইয়ে ইছাখালী এলাকার বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, শিল্পাঞ্চল এলাকা কিছুটা উঁচু হওয়ায় সেদিকে দ্রæত পানি নিষ্কাশন হয়নি। যে কারণে এখনো কিছু এলাকায় পানি জমে আছে। দূষিত পানির কারণে রোগব্যাধি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও মহিলারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে।
ফটিকছড়ির সুয়াবিলের বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, হালদা নদীর পানি কমায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। পানি নামার সাথে সাথে রাস্তাঘাটের করুন অবস্থা দেখা যাচ্ছে। অনেক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মানুষ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পানিবন্দী থাকায় মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাও নিতে পারেনি।
চট্টগ্রামের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় এক লক্ষ ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, তিন লক্ষ ৬০ হাজার ওরস্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় নিয়মিত মেডিকেল টিম চালু ছিল। বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে।’