ফটিকছড়ির ভয়াবহতা কাটেনি স্বস্তি ফিরছে মিরসরাইয়ে

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ফটিকছড়ি ঘিরে দুশ্চিন্তা কাটেনি। এখনো এই উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে। পানিবন্দী আছে ৩০ হাজার পরিবারের দেড়লক্ষ মানুষ। যে কারণে ফটিকছড়ির বন্যা নিয়ে সঙ্কট কাটেনি। এই উপজেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে মিরসরাইসহ অন্যান্য উপজেলার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে।
চট্টগ্রামের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘ফটিকছড়ির বন্যা পরিস্থিতি আগের মতোই। সেখানে এখনও বহু মানুষ পানিবন্দী। মিরসরাইয়ে পানি নামায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। আমরা আগের মতোই বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা ও বরাদ্দ অব্যাহত রেখেছি। জেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা বন্যা প্লাবিত এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে হালদা নদী ও ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর-নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৭৫ টন চাল ও ১৮ লক্ষ টাকা নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ফটিকছড়ির ২০টি ইউনিয়নের ৩০ হাজার ২০০ পানিবন্দী পরিবারের এক লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ, মিরসরাইয়ের ১২ ইউনিয়নের ২৫ হাজার পরিবারের এক লক্ষ মানুষ, সীতাকুন্ডের ৬ ইউনিয়নের ২ হাজার ৭০০
পরিবারের ১২ হাজার মানুষ, হাটহাজারীর ৬ ইউনিয়নের ২০০ পরিবারের ৬০০ মানুষ, বোয়ালখালীর ৩ ইউনিয়নের ১৮০ পরিবারের ১ হাজার ৫০০ মানুষ, বাঁশখালীর ৮ ইউনিয়নের এক হাজার ৭৫০ পরিবারের ৮ হাজার ৭৫০ মানুষ, রাউজানের ৫ ইউনিয়নের ১০৮ পরিবারের ৩ হাজার মানুষ ও সন্দ্বীপের ৩০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিনের ব্যবধানে মিরসরাইয়ে পানিবন্দি পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে। তবে স্থিতিবস্থায় রয়েছে ফটিকছড়ির বন্যা পরিস্থিতি। একইভাবে হাটহাজারী ও সীতাকুÐে পানিবন্দী মানুষ কমেছে।’
এদিকে ফটিকছড়িতে এখনও ৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। এছাড়াও মিরসরাইয়ের ৮২টি, হাটহাজারীর একটি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে। তিন উপজেলার ১৫২ আশ্রয়কেন্দ্রে ৭হাজার ৬৬৬ পুরুষ, ৯ হাজার ২৫০ মহিলা, ৫ হাজার ৫৫৭ শিশু, ৬০ প্রতিবন্ধী মিলিয়ে ২২ হাজার ৫৩৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও ৪৯৪টি গবাদিপশু আশ্রয়ে রয়েছে। গঠন করা ৪৮টি মেডিকেল টিমের মধ্যে ২৯টি চালু আছে।
ফটিকছড়ি প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানিতে উপজেলার পূর্ব সুয়াবিল, পশ্চিম সুয়াবিল, নাজিরহাট পৌরসভা, পাইন্দং, ভুজপুর, হারুয়ালছড়ি, শোভনছড়ি, সমিতির হাট, বাগানবাজার, হেঁয়াকো, নারায়ণহাট ও সুন্দরপুর এলাকার মানুষের বাড়িঘর ডুবে আছে। হালদার বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে পানি জমে আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে ফটিকছড়ি। ২০ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানি । গত বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিতদের উদ্ধার, নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। পানি কিছুটা নামলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’