ফারাক্কার সব গেট খুলে দিল ভারত

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিহার ও ঝাড়খন্ডে বন্যার কারণে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেটের সবগুলোই ভারত খুলে দিয়েছে বলে খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। বাঁধ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে নিউজ এইট্টিন এক প্রতিবেদনে লিখেছে, বিহার ও ঝাড়খন্ডে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় এবং ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের জলস্তর বৃদ্ধি হতেই সমস্ত গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
জলস্তর বৃদ্ধি পওয়ায় ১১ লক্ষ কিউসেক পানি ছাড়ার তথ্য দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, এই জল ছাড়ার ফলে গঙ্গা থেকে জল ঢুকছে বিভিন্ন গ্রামে ও মাঠে। বন্যার আশঙ্কা করছেন মুর্শিদাবাদের মানুষ। বিহার, ঝাড়খন্ড-সহ গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে হুহু করে বাড়ছে গঙ্গার জলস্তর। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ পুরোপুরি চালু হয় ১৯৭৫ সালে। এ বাঁধের আপ স্ট্রিমে পানি ধারণ ক্ষমতা ২৬.২৪ মিটার এবং বিপৎসীমা ২২.২৫ মিটার।
পানি না ছাড়লে ফারাক্কা ব্যারেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল, এমন তথ্য দিয়ে নিউজ এইট্টিন লিখেছে, তবে ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার কারণেই বাংলাদেশ প্লাবিত হচ্ছে বলেই দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও ফারাক্কা খুলে দেওয়ার খবর এসেছে।
ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর দেশ পান্ডেকে উদ্ধৃত করে একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে, ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সবসময় অ্যালার্ট রয়েছে। প্রতিমুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে যেভাবে পানির চাপ তৈরি হয়েছে তাত ১০৯ গেটের সবকটি খুলে না দিল ব্যারাজের ওপর বড় চাপ তৈরি হচ্ছিল। বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। আপাতত ফিডার ক্যানেলে ৪০ হাজার কিউসেক ও ডাউন স্ট্রিমে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে এখনও তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি জানিয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান বলেন, সাধারণত বর্ষার সময় ফারাক্কা ব্যারেজের সব গেট খোলাই থাকে। কারণ গেট খেলা না থাকলে তো আমরা এই পানি পেতাম না। তবে ভারতের দুটি রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার ফারাক্কায় চাপ বেড়েছে।
মোকলেসুর রহমান বলেন, এটি স্বাভাবিক বন্যার পানি; পাহাড়ি ঢল নামেনি। ফলে বড় আশঙ্কার কিছু নেই।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, পদ্মার রাজশাহী পয়েন্টে আজ (সোমবার) সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ২৮ মিটার। সেটি বেড়ে সন্ধ্যা ৬টায় হয়েছে ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। অর্থাৎ, ওই সীমা ছাড়িয়ে গেলে বন্যা বলা যাবে।
ফারাক্কা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ার যে কথা শোনা যাচ্ছে, তার প্রভাব এখনো পদ্মায় পড়েনি। সেই পানি রাজশাহীতে আসতে সময় লাগবে। আগামীকাল (আজ) থেকে তার প্রভাব বোঝা যেতে পারে।
এনামুল হক বলেন, ভারতে বন্যা বেশি হলে ফারাক্কা হয়ে বেশি পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এটাই স্বাভাবিক। পদ্মায় পানি বাড়লে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়। বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ফারাক্কা বাঁধের বড় কোনো প্রভাব এখনই বাংলাদেশে পড়বে না বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।
গতকাল রাতে তিনি বলে, ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় পানি বাড়বে সেরকম কিছু এখনই দেখছি না। গঙ্গা অববাহিকায় নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী পাঁচ দিনেও স্থিতিশীল থাকবে বলেই ধারণা করছি। এখানই পানি বিপৎসীমায় যাবার ঝুঁকি আপাতত নেই।
ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে ভারত থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ফারাক্কার যে বাঁধগুলো খুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, এগুলো আগে থেকেই খোলা ছিল, সব বাঁধই এরকম খোলা থাকে। এক্ষেত্রে কোনো পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয় না। আমরা যেমন আমাদের তিস্তা ব্যারেজ খুলে দিই, তেমন অন্য ব্যারেজগুলোও খোলা থাকে।

ফারাক্কা ব্যারাজ খুলে দেওয়ার বিষয়ে যা বলল ভারত : ফারাক্কার গেট খুলে দেয়াকে স্বাভাবিক মৌসুমি বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেন, আমরা ফারাক্কা ব্যারেজের গেটগুলো খোলার বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখেছি, যেখানে বলা হচ্ছে এর ফলে গঙ্গা বা পদ্মা নদীর প্রাকৃতিক গতিপথের ভাটি অংশে ১১ লাখ কিউসেক পানির অতিরিক্ত প্রবাহ ঘটবে। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি নয়াদিল্লিতে এ কথা বলেন।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বস্তুত এটি একটি স্বাভাবিক মৌসুমি বিষয় যা উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ঘটে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, রণধীর জ্যাসওয়াল বলেছেন, আমরা গণমাধ্যমে ফারাক্কা ব্যারাজের গেটগুলো খুলে দেওয়ার খবর দেখতে পেয়েছি। যার ফলে গঙ্গা বা পদ্মা নদীতে স্বাভাবিক গতিপথ ধরে ভাটির দিকে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হবে। তিনি বলেন, এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। মূলত উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এমনটা ঘটেছে।
রণধীর জ্যাসওয়াল বলেন, এটি বুঝতে হবে যে ফারাক্কা একটি ব্যারাজ, ড্যাম নয় (ব্যারাজ হলো পানির প্রবাহের ওপর এমন একটি বাধা, যার সাহায্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি অন্যদিকে প্রবাহিত করা হয় এবং ড্যামের মাধ্যমে কোনো প্রবাহের ওপর বাধা দিয়ে উজানে পানি ধরে রাখা হয়)। যখনই এখানে পানি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে আসে, তখন তা স্বাভাবিক গতিতে বয়ে যায়।
ফারাক্কা ব্যারাজের উদ্দেশ্য তুলে ধরে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এটি কেবল একটি কাঠামো, যার মাধ্যমে খুব সাবধানে প্রধান নদী গঙ্গা বা পদ্মা ওপর একটি গেট সিস্টেম ব্যবহার করে ফারাক্কা খালে ৪০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত করা হয় এবং ভারসাম্যপূর্ণ পানি প্রধান নদী হয়ে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়।
ফারাক্কা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ার তথ্য আদান-প্রদান প্রসঙ্গে রণধীর জ্যাসওয়াল বলেন, প্রটোকল অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত ও সময়মতো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়, এবারও তা-ই করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভুল- বোঝাবুঝি সৃষ্টির জন্য এই বিষয়ে ভুয়া ভিডিও, গুজব এবং ভীতি ছড়ানোর বিষয়টি আমরা দেখেছি। দৃঢ়ভাবে সত্য তথ্যের মাধ্যমে এই বিষয়টির মোকাবিলা করা উচিত।