‘অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি’

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ না দেখে হতাশ হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভাষণে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো স্বল্প সময়ে করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের দাবি জানিয়েছেন।
সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের আমলের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় তিনি এই দাবি জানান।
বিএনপি নেতা এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিন ইউনূস সরকারের সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, নির্বাচনের নিয়ে আলোচনা দাবি করলেন। খবর বিডিনিউজের।
আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস তার সরকারের যে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, সে বিষয়ে ফখরুল বলেন, এখনও আমি ধোঁয়াশায়, যে অবস্থাটা সেটা আমার পরিষ্কার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, তিনি একটা রোডম্যাপ দেবেন, সেই রোডম্যাপ আমরা কিন্তু ‘ট্রানজিশন টু ডেমোক্রেসি’, এটা আমরা কিন্তু উনার বক্তব্যের মধ্যে পাইনি।
রিফর্মসের কথা বলেছেন, সেই রিফর্মগুলো কোন কোন বিষয়, সেটারও কিছু কিছু তিনি আভাস দিয়েছেন, আমি জানি, সেগুলো এই অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না।
নির্বাচন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনি সঠিক বলেছেন। অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তো রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াটির দিকে যাবেন খুব দ্রুত যাবে এবং তিনি রাজনৈতিকগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এসে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিলেন ফখরুল। দুই দিন পর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করা হয়।
গত ১২ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক করে এসে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টি আমরা অবশ্যই দিয়েছি।
তবে ১৫ আগস্ট থেকে বিএনপি নেতার বক্তব্য কিছুটা পাল্টে যেতে থাকে। সেদিন নয়া পল্টনে বিএনপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, তারা সরকারকে ততক্ষণ সমর্থন দেবেন, যতক্ষণ তারা ‘গণতন্ত্রের পক্ষে’ থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। কোনো দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা নিয়ে কিছু বলছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল পত্রিকায় কলাম লিখে সংবিধান স্থগিত বা রদ করার আহবান জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন ছাড়া তো সম্ভব নয়, নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু অবাধ হয়, সবাই যেন ভোট দিতে পারে এবং এই নির্বাচনের ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি না হয় যে আবার সেই আগের অবস্থা ফিরে আসে তাহলে সেটা কখনই জনগণ মেনে নেবে না।
সেজন্য ধৈর্য ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, জনগণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন হবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশকে যেন কেউ পুলিশি রাষ্ট্র বানাতে না পারে, সে অবস্থা তিনি করবেন। ফখরুল বলেন, অত্যন্ত ভালো কথা। আমরা এটাই চাচ্ছি সব সময় যে আমরা পুলিশ স্টেটে পরিণত হতে চাই না।
পুলিশ আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবে, পুলিশ প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে বলে দেবে যে, ‘এটা করা যাবে, এটা করা যাবে না’ অথবা আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমাদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে করে আমাদের সর্বনাশ করবে, আমাদের ছেলেদেরকে গুলি করবে, এটা আমরা আর দেখতে চাই না। এটা যদি উনারা করে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে।
ফখরুল বলেন, তিনি (ইউনূস) বলেছেন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে ন্যায়বিচার করা হবে। আমরা এটাই চাচ্ছি, বার বার করে বলছি এই বিচার করতেই হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’, ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে অভিযোগ করে সেগুলো প্রত্যাহারেরও দাবি জানান বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখলাম যে, প্রধান উপদেষ্টার মামলা চলে গেছে, উঠানো হয়েছে, আরেকজন উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে। সাজা ছিল সেই সাজা বাতিল করা হয়েছে।
আমাদের একজন মানুষও নাই, বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, এখানে আমরা যারা বসে আছি যাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা নাই। এই মামলাগুলো অবিলম্বে তুলে দিতে হবে।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের সচিবালয় ঘেরাওকে ‘অশনিসংকেত‘ আখ্যা দেন ফখরুল। তিনি বলেন, এটা ভালো লক্ষণ নয়। বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য যারা পরাজিত তারা বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রশাসনে থাকা ব্যক্তিদেরকে দ্রুত অপসারণের দাবি করে ফখরুল বলেন, আমরা তাদের মুখও দেখতে চাই না।