কাপ্তাই বাঁধের ১৬ গেট খোলা হয়েছে দুই দফা

4

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

কাপ্তাই হ্রদে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছার কারণে গতকাল রবিবার সকাল ৮টায় ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট। তবে ছয় ঘণ্টা পর দুপুর দুইটার দিকে গেটগুলো পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর ৫ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ফের খোলা হয় ১৬টি গেট। এ সময় পানি ছাড়া হচ্ছিল চার ইঞ্চি করে। গতকাল রবিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, এ পানি ছাড়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) এটিএম আব্দুজ্জাহের গেট বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গেট খোলা থাকা অবস্থায় প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হয়েছে।
গেট খুলে দেওয়ায় ভাটিতে অবস্থিত রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা বন্যার আতঙ্কে ছিলেন। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব ভাটি অঞ্চলে পড়েনি বলে প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সরেজমিন গতকাল দুপুর একটার দিকে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল সংলগ্ন নদীঘাটে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিকভাবে কর্ণফুলী নদীতে পানি চলাচল করছে। গেট খুলে দেওয়ার পর নদীতে পানি বেড়েছে কি না, তা দেখতে এসেছেন উৎসুক লোকজন। নদী পাড়ের নির্মল বাতাস উপভোগ করতে দেখা যায় তাদের।
চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের ব্যবসায়ী নেতা সুধীর ধর জানান, বাঁধের পানি ছেড়েছে, তা মনেই হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল করছে। বাঁধের পানি এভাবে অল্প অল্প করে ছাড়লে রাঙ্গুনিয়াসহ অন্যান্য নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
চন্দ্রঘোনার বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার গৌরপদ বলেন, আমার বাড়ি কর্ণফুলী নদীর শ্যামার পাড়ায়। আমরা কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। সকাল থেকে পানি ছেড়েছে, তেমন সমস্যা হয়নি। এক সময় কাপ্তাই বাঁধ ছাড়লে ঘরবাড়ি তলিয়ে যেত। এখন তো সে রকম কিছু হয়নি। আশা করি, সামনের দিনেও তেমন কিছু হবে না।
রাঙ্গুনিয়ার কৃষকদের আশঙ্কা ছিল বাঁধের পানি ছাড়লে উপজেলার শস্যভান্ডার গুমাইবিলে পানি আরও বেড়ে যাবে। উপজেলা কৃষি দপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, গুমাইবিলে গতকাল শনিবার ৪ ফুটের মতো পানি ছিল। সেই তুলনায় এখন পানি আরও কমে গেছে। বাঁধের গেট খোলার কারণে গুমাইবিলে তেমন প্রভাব পড়েনি।
উত্তম কুমার আরও বলেন, ৫ দিন পর বিল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এই বিলে ৭০ শতাংশ বন্যা সহনশীল জাতের চারা লাগানো হয়। ফলে চারা নষ্ট হয়নি।
ওাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, কাপ্তাই বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার প্রভাব উপজেলায় নেই বললেই চলে। তবু ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের লোকজন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে বাঁধের স্পিলওয়ে খুলে দেওয়ার খবরে তৎপর হয় স্থানীয় প্রশাসন। কর্ণফুলী নদী ও শাখা খালের তীরবর্তী এবং নিচু অঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে সরে যেতে করা হয় মাইকিং। নদী তীরবর্তী অনেক বাসিন্দা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। অনেকে সরিয়ে নেন ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে পানি ছিল ১০৭ দশমিক ৬৬ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল), যা বিপৎসীমার কাছাকাছি। হ্রদের উজান ও ভাটি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে শনিবার রাত ১০টার দিকে বাঁধের ১৬টি ফটক পানি নিষ্কাশনের জন্য ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে এর পরিবর্তে গতকাল রবিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ১৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়। পরে দুপুর দুইটার দিকে বন্ধ করা হয়।
কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বর্ষাকালে হ্রদে অতিরিক্ত পানি বাড়লে বাঁধের গেট খুলে দেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।