৮ বছর পর কারামুক্ত আসলাম চৌধুরী

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বিএনপি নেতা লায়ন মো. আসলাম চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হন। এ সময় জেলগেটে অসংখ্য নেতাকর্মী তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
আসলাম চৌধুরীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কেএম সাইফুল ইসলাম জানান, আসলাম চৌধুরীকে ৭৬টি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাবন্দী করে রাখা হয়। ৭৫টি মামলায় জামিন হয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে ঢাকার কোতোয়ালী থানার রাজনৈতিক মামলায় এজাহারে নাম না থাকা সত্তে¡ও ২০২১ সালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মুক্তি প্রক্রিয়া আটকে রাখা হয়। ওই মামলায় ৫ জানুয়ারি ২০২২ সালে মহামান্য হাইকোর্ট জামিন দিলে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজে আপিল করে জামিন স্থগিত করা হয়। ১৯ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়েরকৃত আপিল খারিজ করে দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আসলাম চৌধুরী। তারপর তার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা হতে থাকে। মোসাদ কানেকশনের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়। তিনি ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার হলেও, তাকে ২০১৩ সালে হেফাজত আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া নাশকতার মামলায়ও শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় আওয়ামী লীগ সরকার। তাকে বিনা বিচারে ৮ বছর চার মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ৭৬টি মামলার মধ্যে কোন মামলায় এখনও তার সাজা হয়নি, কোনো মামলায় তিনি খালাসও পাননি। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকায় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
আসলাম চৌধুরীর এপিএস মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্যার কারামুক্ত হন। কারা ফটকে নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তাকে। পরে সীতাকুন্ডের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
২০০২ সালে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন আসলাম চৌধুরী। তখন বিএনপির এ অঙ্গসংগঠনের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে ২০০৭ সালে উত্তর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর দুই বছরের মধ্যে উঠে আসেন জেলার সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে। পাশাপাশি জায়গা করে নেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। ৫ বছর পর ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল জেলা বিএনপির সভাপতির পদও তার দখলে চলে আসে। তার দুই বছর পর কিছুদিন আগে দলের যুগ্ম মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে আসেন তিনি। আসলাম চৌধুরীর এমন উত্থানে চট্টগ্রামের অনেক বিএনপি নেতাও হতবাক হন। তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে ক্রমেই পরিচিত হতে থাকেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন আসলাম চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে এফসিএ পাস করেন। চাকরি নেন চট্টগ্রামের কবির স্টিল মিলে। পরে এখান থেকে কনফিডেন্স সিমেন্ট কোম্পানির অর্থব্যবস্থাপক পদে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে এই সিমেন্ট কোম্পানিতে সিএফও (হিসাব বিভাগের প্রধান) পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরিতে থাকাকালীন তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে চাকরি ছেড়ে কনফিডেন্স সল্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে শুরু করেন ব্যবসা। যোগ দেন বিএনপির রাজনীতিতে।