দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দিনভর রাজপথে ছাত্র-জনতা

2

মনিরুল ইসলাম মুন্না

১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য প্রতিহত, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসি-সহ নানা দাবিতে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচির শুরুতে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দিনভর নগরীর বিভিন্ন এলাকা শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল। এসময় শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে শেখ হাসিনার ফাঁসি, জুলাই গণহত্যায় দায়ীদের দ্রুত বিচার এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ছাত্রসমাজ রাজপথে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সপ্তাহব্যাপী রেজিস্ট্যান্স উইকের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময় নেতৃবৃন্দ ৪ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে যেসব হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। ২. সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দদলসহ যারা পরিকল্পিতভাবে হামলা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় ছিল তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৩. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা, হত্যাকাÐকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের চেষ্টা করেছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৪. প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা- ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘মন্ত্রণালয়ের সচিব/কমিশনের প্রধানদের পদত্যাগ করতে হবে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বিচারে এতগুলো শিক্ষার্থীর প্রাণ কেড়ে নেয়া চারটিখানি কথা নয়। আমরা শেখ হাসিনাসহ জড়িত সকল খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি। ইতোমধ্যে যারা প্রশাসনের হাতে আটক-গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।
এদিকে নিউ মার্কেট মোড়ে চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক মো. ইমনের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিকেলে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ইমনকে কয়েকজন বহিরাগত ছাথ্রদের মাঝখান থেকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে সমন্বয়কদের মধ্যে দুইজন ছাত্রী তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন বলে জানান তিনি।
পূর্বদেশকে ইমন বলেন, আমাদের মাঝে বহিরাগত প্রবেশ করা শুরু করেছে। আন্দোলনকে তারা নস্যাৎ করার পাঁয়তারা করছে। বাস্তবে তাদের দেখে চেনার উপায় নাই যে, তারা ছাত্র নাকি অন্য কেউ। দুই বোন সহযোগিতা করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে না গেলে আজ হয়তো ভয়াবহ কিছু হতে পারতো। পুলিশ ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা এসব দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আনেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের আগ্রাসনে বন্দি ছিলাম। এখনও নিস্তার পাচ্ছি না।
এদিকে, বহদ্দারহাট মোড়, ইপিজেড, মইজ্জ্যারটেকসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠন।
অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে কোনও কর্মসূচি ছিল না আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর। দলীয় কার্যালয়গুলোতে ছিল না কোনও নেতাকর্মী।