সিএমপির ১১ থানায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় সাদা পোশাকে বেশিরভাগ থানায় কার্যক্রম সীমিত আকারে শুরু হয়েছে। তবে থানাগুলোতে এখনো যোগদান করেননি অনেক পুলিশ সদস্য। এছাড়া যেসব থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেগুলোর কার্যক্রম এখনো বন্ধ রয়েছে। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে ১৬টি ও জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে জেলা পুলিশের অধীন ১৭টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে নগরীতে তিনটি থানা ও জেলায় ১৬টি থানার কার্যক্রম আংশিক শুরুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকালে নগরী ও জেলার বেশ কয়েকটি থানায়, ফাঁড়ি, ক্যাম্প ও পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট হয়। থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাশাপাশি থানার সামনে রাখা পুলিশের যানবাহনও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের থানাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিএমপির কোতোয়ালী, পতেঙ্গা, ইপিজেড, বন্দর, পাহাড়তলী, আকবরশাহ ও সদরঘাট থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। অন্যান্য থানাগুলোতে ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকে নগরী ও জেলার থানাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। থানা, ফাঁড়ি এবং ক্যাম্পগুলো পুলিশশূন্য রয়েছে। পুলিশ সদস্যরাও নিজেদের নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতি পালন করা শুরু করে। এতে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা চেষ্টা করেও অধস্তন পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরাতে পারেননি। এসবের পর গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থেকে কিছু থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরের আংশিক কার্যক্রম শুরু হয়।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, আমরা দুয়েকটি বাদে সব থানার কার্যক্রম শুরু করেছি। যেসব থানা বন্ধ আছে সেগুলোও চালুর চেষ্টা করছি। তবে আপাতত থানাগুলোতে সীমিত আকারে কার্যক্রম চলছে। আমরা নাগরিকদের সকল ধরনের সেবা প্রদানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে সব থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।
সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ পূর্বদেশকে বলেন, সিএমপি’র চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, সদরঘাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, কর্ণফুলী, বন্দর থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। আগামীকাল (শনিবার) থেকে হালিশহর, ডবলমুরিং ও কোতোয়ালী থানা প্রাঙ্গনে কার্যক্রম শুরু হবে। একইভাবে ইপিজেড থানাধীন নিউমুরিং ফাঁড়ির কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হবে এবং পতেঙ্গা থানার কার্যক্রম শুরু করার জন্য নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ জেলার সকল থানার কার্যক্রম আংশিকভাবে শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। পুলিশবিহীন চট্টগ্রামে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
এদিকে সারা দেশের পুলিশ সদস্যকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্ব স্ব পুলিশ লাইন্স, দপ্তর, পিওএম ও ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। গত বুধবার আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এ কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই স্ব স্ব ইউনিটে নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে সব শুরু করতে চাই।
ছাত্র আন্দোলন দমনে অপারেশনাল ভুলত্রæটি থাকার কথা স্বীকার করে আইজিপি বলেন, ছাত্র-সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। সব কিছুর জন্য আইজিপি হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্সকে স্ব-স্ব পুলিশ লাইন্সে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বর্ণিত কমিটি থানা ও থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপৎকালীন সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে এবং পরবর্তীতে এর চ‚ড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। আমি পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সব স্তরের সহকর্মীকে সামাজিক মাধ্যমে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত, সমিতি, ব্যাচ, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কোনো দাবি, মন্তব্য, প্রতিউত্তর প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছি।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ প্রতিটি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই রাষ্ট্রের মূল শক্তি। তাই, আমরা সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দক্ষ, জনবান্ধব, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদার পুলিশ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সবাই একযোগে কাজ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব।