বাহিনীর কেউ কেউ আইন ভেঙেছেন

4

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ আইন ভেঙেছে; তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সরকারের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় হতাহতের বিষয়ে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠনের তরফে বলা হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অতিরিক্ত’ বল প্রয়োগ ও ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। খবর বিডিনিউজের
এ বিষয়ে সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য যারা আছে, কারোই গুলি করার পারমিশন ছিল না। সংবিধান ও আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটা অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কেউ আইন ভাঙেননি, অন দ্যা গ্রাউন্ডে। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনব’।
পুরো পৃথিবীতে এই ধরনের ঘটনা ঘটে বলে দাবি করে আরাফাত বলেন, ‘আমেরিকাতেও ঘটেছে আপনারা দেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই আইন ভেঙে ফেলে। সরকার থেকে তো তাদেরকে আইন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয় না। কিন্তু তারা এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। আমাদের দায়িত্ব হলো যারা আইন ভেঙেছেন, যারা অন্যায় করেছেন, সে যেই হোন; আমরা তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করব’।
সহিংসতায় হতাহতের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী আরাফাত। তিনি বলেন, ‘সহিংসতায় যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেটা দেশ জাতির জন্য বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই হতাহতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, গভীর নিন্দা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্ত করবে, এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করব। কারণ হচ্ছে, আমরা এখানে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই’।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সহিংসতা প্রতিটি মৃত্যুর জন্য আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত তেমনি দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয় পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। আর এই মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই অপপ্রচার করা হচ্ছে। এই ক্ষতির যেমন আপনারা একটা অংশ আমরাও একটা অংশ। আপনারা যেমন এটার বিচার চান আমরাও এটার বিচার চাই।
কোনো মৃত্যুই কাম্য ছিল না দাবি করে আরাফাত বলেন, ‘একই সঙ্গে প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করব। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য ছিল না। প্রতিটি মৃত্যু আমাদের বুকের ওপরে ভারি হয়ে আটকে আছে। শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী যারা তাদের যে দাবি ছিল, তার মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে অন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, আপনাদের চোখের সামনে তার প্রমাণ রয়েছে’।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে বলে অভিযোগ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জেল ভেঙে জঙ্গিদের নিয়ে যাওয়াসহ যত ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড, এগুলো কী শিক্ষার্থীরা করেছে? করেছে তৃতীয় পক্ষ, অনুপ্রবেশকারী। তারা কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। যাতে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। কিন্তু তারা সরাসরি মুখোমুখি হয়নি, শিক্ষার্থীদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে’।
আন্দোলনের ভিডিও ফুটেজ দেখে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করার কথা বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে, মামলায় নাম থাকা শিক্ষার্থীদের না পেয়ে বাড়ি থেকে তাদের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে ধরে আনা হচ্ছে। এসব ঘটনার সময় আতঙ্কিত অভিভাবকের মৃত্যুর খবরও আসছে।