চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের

13

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালত প্রাঙ্গনে প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘বৈষম্যবিরোধী’ আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার ‘শিক্ষার্থী হত্যার বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়াসহ নয় দফা দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন, যদিও পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা মূল আদালত ভবনের সামনে পৌঁছাতে পারেননি। বিক্ষোভ চলাকালে আদালতের কার্যক্রম সচল ছিল। তবে আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ায় বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া বিচারপ্রার্থী জনগণও চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলেন।
পুলিশ মূল প্রবেশপথে অবস্থান নেওয়ায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মিছিল করে আন্দোলনকারীদের আদালত প্রাঙ্গনে নিয়ে যান। পরে মূল আদালত ভবনের পাশে আইনজীবী এনেক্স ভবনের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। তাদের বিক্ষোভকে ঘিরে আদালত অঙ্গনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল সোয়া তিনটা পর্যন্ত বিক্ষোভের পর আন্দোলনকারীরা আদালত থেকে মিছিল নিয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করেন। মিছিলে কিশোর-তরুণ থেকে মধ্যবয়সী হাজারখানেক লোক অংশ নেন। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়, তবে ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে সেটি জানানো হয়নি।
আদালত প্রাঙ্গনে ঘোষিত কর্মসূচি শুরুর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খন্ড খন্ড মিছিল এসে লালদিঘীর পাড়ে জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে জড়ো হয়। আগে থেকেই লালদিঘীর পাড়, আদালত প্রাঙ্গন থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত এলাকায় পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিল। এ সময় আদালত প্রাঙ্গনে কোনও যানবাহন ঢুকতে দেয় নি পুলিশ। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা দুইদিকের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষকে আদালতে প্রবেশে বাধা দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। পুলিশ দেখলেই আন্দোলনকারীরা ‘ভূয়া, ভূয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। মূল ফটকে পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারণে আন্দোলনকারীরা সেদিকে না এগিয়ে জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনেই অবস্থান করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে সকাল ১১টার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিছিল করে জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে যান। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশের বেষ্টনী সরিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে যান এবং আইনজীবী এনেক্স ভবনের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, আমার ভাই মরল কেন, সরকার জবাব চাই’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের ঘিরে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভস্থলের একপাশে ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ’র ব্যানারে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা মিছিল করার চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা মিছিল করেননি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ায় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী এসে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের সরিয়ে নেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিকেল সোয়া তিনটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। এ সময় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’র সহ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ তিনজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেন। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক বলেন, আন্দোলনকারীরা আদালত প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছে। পুলিশের অবস্থান থাকলেও কাউকে কোনও ধরনের বাধা দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভ শেষে তারা চলে গেছেন। কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা, প্রাণহানিসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রায় ১৫দিন পর প্রকাশ্যে এসেছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’র দুই সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ও খান তালাত মাহমুদ রাফি। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। সমবেতদের উদ্দেশে খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, খুনিদের বিচার না নিয়ে ঘরে ফিরব না আমরা। আমার ভাইদের জেল থেকে বের না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। হয় আমার ভাইদের ছাড়তে হবে, নয়তো কারাগারের আয়তন বড় করতে হবে। সারা বাংলাদেশ জেগে গেছে। ঘরে বসে থাকার সুযোগ আর নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনজীবী, শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাত্রদের খুনের বিচার চায়। আমরা কথা দিচ্ছি, বিচার না নিয়ে যাব না। বাংলাদেশের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। হত্যাযজ্ঞ চলেছে আমার দেশে। আমার টাকায় কেনা বুলেট আমার ওপর ছুঁড়েছে। আমার ভাইদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে। যখন আমরা বিচার চাইতে গিয়েছি তখন ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ভেবেছিল, ইন্টারনেট বন্ধ করলে খুনের দায় থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা জেগে গেছে।