শোকের মাস শুরু

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেদনাবিধূর শোকের আবহ নিয়ে বছর ঘুরে বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা আগস্ট মাস শুরু হয়েছে আজ। শোককে শক্তিতে পরিণত করার অভয়মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত শপথ গ্রহণের প্রথম দিন। ইস্পাত কঠিন ঐক্যে ও দৃঢ় প্রত্যয়ে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নতুন সংকল্পে উজ্জীবিত করতে হবে সকলকে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকান্ডে কালিমালিপ্ত অশ্রুঝরা শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই মাসে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্র বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির চিরন্তন প্রেরণার বাতিঘর, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু ছাড়াও তার সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাতুস্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সব অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় প্রত্যয়, গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শেন মন্ত্রে সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত ও দীক্ষিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্বে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস রচনাকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিশপথে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নরপিশাচরূপী খুনিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য করা হয়। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার ধারবাহিকতায় ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে।
বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব এবং তার চেতনাও অবিনশ্বর। বাঙালি জাতির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিব আদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস-জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে।