জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

১৪ দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে। খবর বাসস ও বাংলা ট্রিবিউনের
এর আগে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-শিবিরকে জঙ্গি উল্লেখ করে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে ধ্বংস করতে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে। তিনি বলেন, শিবির-ছাত্রদল-বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি এবং তারা দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে আমাদের ওপর তাদের থাবা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে দেশব্যাপী তান্ডব সম্পূর্ণভাবে একটি জঙ্গি কর্মকাÐ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোন রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ। এর উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে ধ্বংস করা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালানোয় তিনি বিএনপি-জামায়াত চক্রের কঠোর সমালোচনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে। সবাই সম্মানের চোখে দেখে। আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাচ্ছে যে কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে সেবা দেয় ও মানুষের জীবন মান উন্নত করে, তা ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশকেই ধ্বংস করে ফেলা।
গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাÐের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, অতি সম্তিপ্রতি চোরা-গোপ্তা হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে সরকারের ওপর দায় চাপাতে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ মানুষ হত্যা করে লাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী এ অপশক্তিকে নির্মূল করা প্রয়োজন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দল মনে করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, তাদের শিক্ষাজীবনের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারকে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নেতারা আশা করেন, কোনও শিক্ষার্থী এবং নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন। সেই বিষয়টিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে দেশের সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, জনগণের জানমাল রক্ষার লক্ষ্যে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
দেশের জনগণের মধ্যে পরিপূর্ণ স্বস্তি আনার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাদের প্রতিও ১৪ দলের নেতারা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সভাপতি হাসানুল হক বলেন, আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, জামাত-শিবির সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ এখনও বন্ধ করেনি। তাই মনে করি বাংলাদেশের সাংবিধানিক ধারা, গণতান্ত্রিক ধারা, রাজনীতিকে রক্ষা করতে হলে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর রাজনীতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে তা নিষিদ্ধ করা দরকার। আজ ১৪ দলের সভা থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জামাত-শিবিরকে সংগঠনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হোক। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, আশা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকার নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দল মনে করে আর সময় ক্ষেপণ না করে জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দেশে সামনের দিকে যাতে সন্ত্রাসী, জঙ্গি উত্থান না ঘটাতে পারে সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিশ্চয়ই এক-দুই দিনের মধ্যেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পাবো।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা। বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটা ঐতিহাসিক এবং জাতির বর্তমান যে ক্রান্তিকাল সেই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।