মসজিদ-মন্দিরের দানবাক্স চুরি করাই তাদের কাজ

17

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাত যত গভীর হয় একে একে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে একটি নির্জন স্থানে জড়ো হয় তারা। তারপর দলীয় নেতা কোন জায়গায় চুরি করতে হবে তার পরিকল্পনা গুছিয়ে দেন। শুরু হয় চুরির অভিযান। লক্ষ্য থাকে ভোর হওয়ার আগেই চুরি করে চলে যাওয়া। সাথে চুরির কাজে সহায়ক নানান সরঞ্জামও। একরাতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মাত্র কয়েক ঘন্টায় তারা ৫ থেকে ৭টি মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার, মন্দিরসহ নানা স্থানে রক্ষিত দান বাক্স চুরি করে সঁটকে পড়ে। দান বাক্সের চুরির অর্থ রাতেই ভাগ ভাটোয়ারা শেষে চলে যায় নিজ নিজ ঠিকানায়।
এমনই একটি চোর চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। রাঙ্গুনিয়ায় এক রাতে একটি মন্দির ও ৫টি মাদ্রাসার দান বাক্স চুরির বিষয়টি জানতে পেরে অভিযানে নামে। চক্রের এক সদস্যদের আটকের পর পর ধরা সম্ভব হয় আরো ৫ জনকে।
গত রবিবার ভোর ৬ টার দিকে উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকায় অবস্থিত শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে মন্দিরের দানবাক্র চুরির ঘটনা জানাজানি হয়।
এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্য মো. টিপু ( ৩৯), রমজান আলীর ছেলে মো. আলী (৩০), মো. ইউসুফের ছেলে মো. আদর (১৮), মো. নাসেরের ছেলে মো. রিয়াদ (১৯), মো. রুবেলের ছেলে মো. জুয়েল (১৯), মো. ইউসুফের ছেলে বেলাল হোসেন (২০) কে গ্রেপ্তার করে। আরো দু’জন পলাতক রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী। তিনি জানান, এসব দান বাক্স চুরি স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে পুলিশ-জনতাকে একসাথে কাজ করতে হবে।
এর আগে গত রবিবার ভোরে মন্দিরে পূজা দিতে যান ভক্তরা। এসময় তারা দেখতে পান মন্দিরের লোহার গ্রীলের দরজা ভাঙা। বিষয়টি মন্দির পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় লোকজনকে জানালে তারা গিয়ে মন্দিরে চুরির বিষয়টি অবগত হন। তারা দেখতে পান মন্দিরের ভেতরে রাখা হারমোনিয়াম, দানবাক্স দু’টি, ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা, মনিটর ও রেকর্ডার, মাইক ও পূজার সরঞ্জামাদি নেই। পরে দেখতে পান দু’টি প্রতিমার মধ্যে কৃষ্ণ প্রতিমার গলা, হাত ও পা ভাঙা। এছাড়া রাধা প্রতিমার নাক ভাঙা। মন্দিরের কিছু দূরে টাকা ছাড়া ভাঙা দানবাক্স ও পাশে আগুনে পোড়া হারমোনিয়াম পাওয়া যায়।
পুলিশের হাতে ধরা পড়া চক্রের সদস্যরা মন্দিরসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজারে নিয়মিতভাবেই দান বাক্স চুরির বিষয়টি স্বীকার করে। সহজেই এই কাজ করা যায় বলেও তারা জানায়। দান বাক্সে ভাঙতি পয়সা ও ছোট নোট থাকে বেশী। টাকার অভাব হয় না। চুরির টাকা সব জায়গায় চলে যায়। এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে তাদের সম্পর্কও রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা সবাই মাদক বিক্রির সাথে জড়িত। নিজেরা মাদক সেবন করে তারপর দান বাক্স চুরির কাজে যায়। তাদের একেকটি গ্রæপে ১০ থেকে ১২ জন থাকে বলেও পুলিশ জানায়।