কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন

3

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আবারো আন্দোলনে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের এই ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা দল-মত নির্বিশেষে এ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন এবং তাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনরত এসকল শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে। নির্বাহি বিভাগ থেকে একটি স্স্পুষ্ট ঘোষণার অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি ছিল কোটা সংস্কার করা; কিন্তু আন্দোলনের একপর্যায়ে পাঁচ গ্রেডের সব কোটা বাতিল করে দেয় সরকার।
এবার আন্দোলনকারীরা সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবি করছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বলছেন, কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সময়ের বিবেচনায় সংস্কার করা উচিত।
নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগে কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ের মূলকথা হলো, সব কোটা বজায় রাখতে হবে। তবে প্রয়োজনে বাড়ানো-কমানো যাবে। অবশ্য আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। এর মানে হলো কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। মূলত: কোটা সংক্রান্ত ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিলের রায়ের পর পরই দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে।
তাদের একদফায় বলা হয়েছে- ‘সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের সময়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করেছিল সরকার। ওই কমিটি তিনটি সুপারিশ করে। প্রথম সুপারিশটি ছিল নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া। দ্বিতীয় সুপারিশটি ছিল এসব গ্রেডে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা এবং তৃতীয় সুপারিশটি ছিল কোটা বাতিলের ফলে কোটার সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রভাব সম্পর্কে নির্দিষ্ট সময়ে পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। অর্থাৎ প্রথম দুটি সুপারিশের মূলকথা হলো, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোটা থাকবে না। এসব পদে নিয়োগ হবে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে।
ওই কমিটির তৃতীয় সুপারিশটির ব্যাখ্যা হলো, সময়ের প্রেক্ষাপটে যদি কোনো পরিবর্তন দেখা দেয় যে কোটা অপরিহার্য, তবে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে। বিষয়টি অনগ্রসর স¤প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সে অনুযায়ী সরকার চাইলে কোটা সংস্কার করতে পারে।
চাকরিতে কোটার বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি এখন আদালতের। তাই আদালতেই এর সমাধান হোক। এরপরও যদি আলোচনা করতে হয়, তা সব সময় করা যাবে।
সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার কিংবা বাতিলে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তব এবং যুক্তিযুক্ত। এই কোটার কারণেই বহু মেধাবি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পরও চাকুরি পাননি। হতাশায় ভোগে শেষমেশ কোনরকমে একটা বেসরকারি চাকুরি করে সংসার, পরিবার চালাচ্ছেন। এরকম অসংখ্য উদাহরন পাওয়া যাবে। কোটার পাশাপাশি রয়েছে ঘূষ, দুর্নীতির মাধ্যমে চাকুরি নেওয়া। এমনকি দেশের মেধাবি শিক্ষার্থীদের প্রথম চয়েস বিসিএস এ অনেকে ঘুষ দিয়ে চাকুরি নিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ধরনের কয়েকজন কালপ্রিটকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসব অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতির মুলোৎপাটনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারি চাকুরিতে কোটা প্রথা চালু থাকলে সাধারন পরিবারের মেধাবি ছাত্ররা পড়ালেখায় নিরোৎসাহিত হবে এবং হতাশ হয়ে পড়বে। সবধরনের নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হোক- এটাই সবার চাওয়া, সাধারন মানুষের চাওয়া। কোটা নয় যোগ্যতার মাপকাঠি হোক মেধা এমনটাই চাই। সেকারণে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন এবং দাবি যৌক্তিক। আমরা আশা করি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌঁছবেন।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট