কোটাবিরোধীদের অন্য ‘দূরভিসন্ধি’ আছে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

9

কোটাবিরোধীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায় না, তাদের অন্য কোনো দূরঅভিসন্ধি আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গতকাল শনিবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কোটা আন্দোলন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন মন্তব্য করেন তিনি। খবর বিডিনিউজের
তথপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় দাবি পরিবর্তন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আছে- নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা। এগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ধারণা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রের একেক অঙ্গের কাছে একেক দাবি জানাচ্ছে, এখানে তাদের সম্মুখ ধারণার অভাব আছে মনে হচ্ছে।
কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষিত তরুণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিটি কর্মদিবসে কোনো দিন সড়ক ও কোনো দিন সড়কের পাশাপাশি রেলপথও অবরোধ করেন তারা। এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে হাই কোর্টের রায়ের বাস্তবায়নযোগ্য আদেশ, যেখানে কোটা বহাল রেখে প্রয়োজনে তা সংস্কারে সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া আপিল বিভাগে হাই কোর্টের রায়টি চার সপ্তাহের জন্য ‘স্থিতবস্থা’ দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীরা পক্ষভুক্ত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অন্যান্য সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীও মামলায় পক্ষভুক্ত হতে পারেন, আদালতের দরজা তাদের জন্য সব সময় খোলা। তবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে’ নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, সংসদে আইন করে অনগ্রসর জানগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে ‘বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক’ কোটা বাতিলের এক দফা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ছুটির দিন শুক্রবারও তারা ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচি রাখে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে রবিবার নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। এ দিন বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত ঘটনা প্রবাহের ওপর তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলছেন, প্রথমে কোটা আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টে বাতিল হওয়া সরকারের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি করেছে। তবে এটি পুনর্বহালের ক্ষমতা শুধু বিচার বিভাগের। হাই কোর্টের আদেশ রাস্তার আন্দোলনে পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, রায় পরিবর্তন করতে হলে সর্বোচ্চ আদালতে যেতে হবে। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিলও করেছে, আইনি লড়াই শুরু করেছে। তখন সরকারের অবস্থান এবং আন্দোলনকারীদের অবস্থান একই হয়ে গেল। আন্দোলনকারীরা তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগও করেছেন, সরকারের সঙ্গে পক্ষভুক্তও হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা পরে সরকারের কাছে কমিশন গঠনের দাবি করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার আপিল করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করায় কমিশন গঠনের সুযোগ নেই। এমন কি ঘোষণা দেওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, এটা অসাংবিধানিক। তারা সেই অসাংবিধানিক দাবি করতে শুরু করল। এর মধ্যেই সরকার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে চার সপ্তাহের স্থিতিতাবস্থার আদেশ আনতে সক্ষম হয়েছেন। এর ফলে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পতিপত্র পুনর্বহাল হয়ে গেছে। হাই কোর্টের আদেশের আর কার্যকারিতা নেই, সেটিও বলা হয়েছে। ফলে উচ্চ আদালতের প্রাথমিক আদেশে আন্দোলনকারীদের দাবি চার সপ্তাহের জন্য পুরণ হয়ে গেছে।