নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামি ৫ বছরের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ১০ লাখ স্মার্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম অঙ্গীকার। তৈরি পোশাকের পরে তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়নসহ স্মার্ট জনগোষ্ঠি তৈরির প্রয়াসের পাশাপাশি কারিগরি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠাকে সাধুবাদ জানাই আমরা।
এছাড়াও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে ব্যবসা সহজীকরণে আগামি ২০২৪-২৭ পর্যন্ত সময়ে ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে অন্যতম প্রধান লজিস্টিক্স খাতকে আরো গতিশীল করতে অনুমোদিত জাতীয় লজিস্টিক্স নীতিতে সুপারিশকৃত সকল সংস্কারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান চেম্বার সভাপতি। একইসঙ্গে জ্বালানী সেক্টরে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পটি দ্রæত বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার প্রদানেরও দাবি জানান তিনি।
তাছাড়া চট্টগ্রাম-ঢাকা অর্থনৈতিক করিডোরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বে-টার্মিনাল, মেঘনা নদী হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পানি সরবরাহ এবং চট্টগ্রাম নগরীকে ব্যবসাবান্ধব নগরীতে পরিণত করতে বাজেটে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ রাখার আহবান জানানো হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার উত্থাপিত বাজেট উপলক্ষে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এ প্রতিক্রিয়া জানান।
চেম্বার সভাপতি বলেন, বাজেটে মোট ব্যয় ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, মোট আয় ৫ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা এবং মোট ঋণ ২ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। ঘাটতি বাজেট মোকাবেলায় বৈদেশিক ঋণের চেয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসে গুরুত্ব দেয়াকে দেশীয় সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন তিনি।
সরকার ২০২৪-২৭ সালের রপ্তানি নীতি খসড়া চ‚ড়ান্ত করেছে। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখা শিল্প মন্ত্রণালয়ের গতবারের চেয়ে কম বরাদ্দ শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। তাই এই মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে দুই বছর যাবৎ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশেরও বেশী। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির চাপে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসিতে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্তনকৃত কর পূর্বের ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে যা আশাব্যাঞ্জক।
বাজেটে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা ও ফার্মের করধাপ ও করহার নতুন শ্রেণি বিন্যাস অনুযায়ী মধ্যম আয়ের করদাতাদের উপর করের চাপ কিছুটা কমে আসবে যা তাদের জন্য মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলায় এবং অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদা সচল রাখতে সহায়ক হবে। কিন্তু অধিক আয়ের করদাতার করের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক বিনিয়োগের উপর কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ১৫ শতাংশ কর পরিশোধের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বা সম্পদকে প্রদর্শন করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে তা অর্থ পাচাররোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রাইভেট কোম্পানীর করহার শর্তসাপেক্ষে ২৭.৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং এক ব্যক্তি কোম্পানীর ক্ষেত্রে ২২.৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা হয়েছে যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আইটিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে ক্যাশলেস হবার শর্তে ৩ বছর করমুক্ত রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা প্রশংসনীয়।
কিছু কিছু দেশীয় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে যা ইতিবাচক। নির্মাণ খাতে অত্যাবশ্যকীয় সব ধরণের ইটের উপর সুনির্দিষ্ট করহার বৃদ্ধি চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় আরো বাড়িয়ে দিবে যা নির্মাণ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করে ব্যবসায়ী এই নেতা।