৭ জানুয়ারির নির্বাচন সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন চলতি বছরের সাতই জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে সেটিই সবচেয়ে বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই নির্বাচনটি সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার বিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরে হয়ে যাওয়া সংসদ নির্বাচন, আমেরিকার ছাত্রবিক্ষোভ, উপজেলা নির্বাচন, চলমান খরা পরিস্থিতি, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এক প্রশ্নের জবাবে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র বিক্ষোভ দমনে মার্কিন সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন তিনি।
বলেছেন, মার্কিন পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায় আমরা সেটা করতে পারি। আমাদের পুলিশ মনে হয় এখন আমেরিকার পুলিশকে অনুসরণ করতে পারে। আমেরিকান স্টাইলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যারা নির্বাচন বর্জন করে তাদের আসলে নির্বাচন করারই আর সক্ষমতা নেই। খবর বিবিসি বাংলার।
২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাম ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আমরা সব সময় মনে করি, অতি বাম খুব প্রোগ্রেসিভ দল, তারা খুবই গণমুখী দল। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে? সেটা কি ঠিক করতে পরেছে? সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। আর সেটা স্পষ্ট নয় বলে তারা জনগণের সাড়া পাচ্ছে না, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, বিএনপি ও সমমনা দলসহ বেশকিছু বামপন্থী দল সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলো। এখন তারা চলমান উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজের গ্রামে সমবায় পদ্ধতিতে যে চাষাবাদ প্রধানমন্ত্রী করছেন, তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার আগ্রহের কথা জানান তিনি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সমবায় পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে, কমবে খরচ। অনাবাদি জমির পরিমাণও কমে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা¤প্রতিক থাইল্যান্ড সফর সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিলো। তিনি গত ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গ্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে থাইল্যান্ড সফর করেন। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক এই সফরে তিনি ইউএনএসক্যাপ-এর ৮০ তম অধিবেশনেও যোগ দেন।

৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যা বললেন : ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার অভিযোগ করেছিলেন বিভিন্ন সভা সমাবেশে। তার সূত্র ধরেই উঠে আসা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন নির্বাচন নিয়ে অনেক কিছুই হয়েছে যাতে নির্বাচন না হয়। একটু হতাশা ছিল কারও কারও মনে।
কিন্তু আমার শক্তি হলো দেশের জনগণ। জনগণ যতক্ষণ চাইবে ততক্ষণ থাকবো ক্ষমতায়। আমাদের দল কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে আসেনি। আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে। যে কারণে বাধা আসলেও উতরে যেতে পারি, বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেই এবারের নির্বাচন করা হয়েছে।
’৭৫ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে সেগুলো তুলনা করলে দেখা যাবে ২০২৪ সালের সাতই জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিটি নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই নির্বাচন হয়েছে।

আমেরিকার আন্দোলন প্রসঙ্গ : আমেরিকায় বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তাদের আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত।
তিনি বলেন, আমেরিকায় বিভিন্ন স্কুল, শপিং মল, রেস্টুরেন্টে অনবরত বন্দুক হামলা হচ্ছে আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নাই বোধ হয় যে, আমেরিকায় মানুষ না মরছে। তাদের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা ও যুদ্ধের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত কিছুদিন ধরেই তুমুল বিক্ষোভ চলছিলো। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন পুলিশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভ বন্ধ করেছে।
শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গ টেনে বলেন ফিলিস্তিনে যেভাবে গণহত্যা চলছে তা অমানবিক এবং এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করায় আমেরিকায় ৯০০ ছাত্র-শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এটা নাকি গণতন্ত্রের অংশ। এটাও শুনতে হয়। যেভাবে একজন প্রফেসরকে মাটিতে ফেলে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হলো। ২০০১ সালে বিএনপি সন্ত্রাসী ও পুলিশ যেভাবে অত্যাচার করেছিলো সেটাই মনে করিয়ে দেয়। অবশ্য তাদের কাছেই মানবাধিকারের সবক নিতে হয়, এটা দুর্ভাগ্য, বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, মার্কিন পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায় আমরা সেটা করতে পারি। আমাদের পুলিশ মনে হয় এখন আমেরিকার পুলিশকে অনুসরণ করতে পারে। আমেরিকান স্টাইলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ফিলিস্তিনদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দুবার সহযোগিতা পাঠানো হয়েছে। আরও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

থাইল্যান্ড সফরে প্রাপ্তি : প্রধানমন্ত্রী তাঁর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, থাইল্যান্ডের সফরে কী পেলাম আর কী পেলাম না- সেটা বড় বিষয় নয়। নতুন করে কিন্তু অর্থনীতির একটি দুয়ার খুলেছে। থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব এখন নতুন যুগে। তিনি বলেন, খাদ্য ও ফল উৎপাদনের বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে। থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগ করার আহবান করা হয়েছে। পাসপোর্ট ছাড়া যেন বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়া যায়, সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এ সফরের অর্জন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে থাইল্যান্ডে সরাসরি কার্গো নেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে এবং অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা এখন সহজে যেতে পারবে।

মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বললো থাইল্যান্ড : মিয়ানমারের উপর থাইল্যান্ডের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের চলমান সংকট ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছি কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার সফরে শরণার্থী প্রত্যাবাসন ইস্যুটি আলোচনায় এসেছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি গভীরভাবে দেখবেন, যতটা সহযোগিতা করার করবেন। এ কথা তিনি দিয়েছেন।
আসিয়ানের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সদস্য হতে পারলে ভালো, তবে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন নয়, পর্যবেক্ষক হিসেব আছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে ‘অতি বাম ও ডানরা মিলে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে’। এ বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বামরা নব্বই ডিগ্রি ঘুরে গেলে তো কিছু করার নেই।

উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গ : চলমান উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে অংশ না নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনেকে মানছেন না- একজন সাংবাদিক এমন তথ্য দিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি ইলেকশনটা যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। আমি বলতে চেয়েছি কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই বলতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে অর্থবহ করাই লক্ষ্য। কেউ কেউ বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছে। যারা বর্জন করে নির্বাচন করার সক্ষমতাই তাদের নেই। কারণ সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে তো পাবলিক গ্রহণ করবে না।
আমাদের চেষ্টা হলো নির্বাচন আরও গণমুখী ও স্বচ্ছ করা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মুক্ত করে নির্বাচন কমিশনকে আলাদা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যাতে তারা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রেখে অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হোক সেটাই চেয়েছি। মানুষ যাকে চাইবে তাকেই ভোট দিবে।

১৪ দল আছে নাকি নেই? : ১৪ দল থাকবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, চৌদ্দ দলীয় জোট আছে ও থাকবে। আমি তাদের সাথে শিগগিরই বৈঠক করবো। আমার নিজেরও যোগাযোগ আছে। দলের সাধারণ সম্পাদকও যোগাযোগ রাখেন। ১৪ দল গত নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। জেতা না জেতা ভিন্ন কথা। কিন্তু জোট আছে, থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে চক্রান্তই হয়। তবুও বাজারের ওপর নজরদারি আছে ও থাকবে। আর মূল্যস্ফীতি বিশ্বব্যাপী, কোথায় নেই? তবে আমরা জানি যে সুনির্দিষ্ট বেতনে যারা চলে তারা একটু কষ্টে আছে। এজন্য কার্ড করে দেয়া হয়েছে যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্য পায়। এতে একটু হলেও তারা স্বস্তি পাচ্ছে।