৫ ঘণ্টা নয়, মূল্যায়ন হবে ‘এক স্কুল কর্মদিবস’ সময়ে

14

পূর্বদেশ ডেস্ক

নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল সামবার জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাবিত মূল্যায়ন পদ্ধতির ছোটখাটো সংশোধন ও পরিমার্জন সাপেক্ষে এটি চূড়ান্ত করা হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুমোদন করা হয়েছে। তবে সেখানে কিছু ছোটখাটো সংশোধন-পরিমার্জন আছে। খবর বাংলানিউজের।
আমরা আগে যেভাবে বলেছিলাম, ৫ ঘণ্টার পরীক্ষা, তা ঘণ্টা নয়, বেসিক্যালি হবে এক স্কুল কর্মদিবস অর্থাৎ একটা স্কুল সময় যা হয়, সেই সময়ের মধ্যে পরীক্ষা হবে। তিনি আরও বলেন, যেভাবে আমরা বলেছি, প্রশ্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রম-ভিত্তিক, তা আছে। যেভাবে সেভেন পয়েন্ট স্কেলের কথা বলেছি, তা আছে, শিখনকালীন এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন আছে, সবই ঠিক আছে। ছোটখাটো কিছু সংশোধনী আছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, যারা জানুয়ারিতে দশম শ্রেণিতে উঠবে, তাদের থেকেই পাবলিক পরীক্ষায় এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন শুরু হবে। পরিমার্জন ও ছোটখাটো সংশোধনীগুলো ফাইনাল করে পরে বিস্তারিত জানাব।
এনসিটিবির খসড়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রতিটি বিষয়ে মিড টার্ম ও বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় ধরা হয় পাঁচ ঘণ্টা। এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাও পাঁচ ঘণ্টা করার প্রস্তাব জানানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালে প্রথম ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবমে এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ২০২৬ সালে।
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে জল্পনা-কল্পন। অবশেষে মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)।
গতকাল সোমবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনসিসিসির বৈঠকে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এতে কিছু সংশোধনী আনার পরামর্শ দিয়েছে কমিটির সদস্যরা। সংশোধনীগুলো যুক্ত হলেই তাতে সই করবেন এনসিসিসির সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যেভাবে প্রস্তাব করেছিলাম, আগে যা যা ছিল, সেভাবেই থাকছে। ছোটোখাটো কিছু সংশোধনী সহ মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের সভায় প্রস্তাবিত কাঠামো, নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ৬৫ শতাংশ লিখিত এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক থাকছে।
চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হচ্ছে ৩৫ শতাংশ।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কার্যক্রম বলতে বোঝানো হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। আরও সহজ করে বললে হাতে-কলমে কাজ।
এর আগে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি কার্যক্রমভিত্তিক অর্থাৎ হাতে-কলমে মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ আর লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ করার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছিল। এরপর তা থেকে কিছুটা পরিবর্তন এনে লিখিত অংশের ওয়েটেজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময়টি পাঁচ ঘণ্টা রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এ পরীক্ষা হবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া প্রণয়ন করে এনসিটিবি। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও উপস্থাপন করা হয়। পরে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে নতুন কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সভায় তা আবারও সংশোধন করা হয়। আনুষঙ্গিক কাজ শেষে এনসিটিবির বোর্ড সভায় সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তারপর সেটি এনসিসিসির সভায় উপস্থাপনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।