৪ আসামির মৃত্যুদন্ড একজনের যাবজ্জীবন

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে এক ব্যক্তিকে খুনের পর লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় চারজনকে মৃত্যুদন্ড ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এইচ এম শফিকুল ইসলাম এ রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা পিপি অঞ্জন বিশ্বাস।
খুনের শিকার পঞ্চাশোর্ধ্ব সুলাল চৌধুরী রাউজন উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। একই ইউনিয়নের যুগীরহাট চালবাজারে অভয়া ঔষধালয় নামে তার একটি আয়ুবের্দিক ফার্মেসি ছিল।
২০১৬ সালের ২৫ জুন রাত ৯টার দিকে রিকশায় করে ফার্মেসি থেকে বাড়িতে ফেরার পথে তাকে নোয়াজিশপুর-চিকদাইর সড়কে প্রিয়তোষ কবিরাজের বাড়ি সংলগ্ন ব্রিজের সামনে কুপিয়ে খুন করে আসামিরা।এরপর তার লাশ গুমের উদ্দেশে ব্রিজের নিচে খালের মধ্যে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে। গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় তার স্ত্রী ও সন্তান স্থানীয়দের নিয়ে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে খালে লাশের সন্ধান পান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সুলালের ছেলে সৌরভ চৌধুরী বাদী হয়ে রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত পিপি অঞ্জন বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি একই গ্রামের মিঠু চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন ও এরশাদ হোসেনকে দন্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় মৃত্যুদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। সুদীপ চৌধুরী নামে আরেক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিনমাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রিকশাচালক মো. ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। দন্ডিতদের মধ্যে দেলোয়ার এবং খালাস পাওয়া ইলিয়াস রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। দেলোয়ারকে সাজামূলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পলাতক তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী সুদীপ কান্তি নাথ বলেন, ‘আসামি মিঠু চৌধুরী খুন হওয়া সুলালের দূরসম্পর্কের ভাইপো। তাদের ঘর একেবারে লাগোয়া। বাড়ির সীমানা নিয়ে সুলালের সঙ্গে মিঠুর বিরোধ হয়। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশও হয়। সেই বিরোধের জেরে অন্য আসামিদের নিয়ে মিঠু খুনের পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে তাদের নিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি রাতের মতো ঘটনার রাতে ইলিয়াসের রিকশায় করে ফার্মেসি থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন সুলাল চৌধুরী। রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায়ের কারণে রাস্তাঘাটে লোকজন ছিল না। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দন্ডিত পাঁচজন তাদের আক্রমণ করে। সুলালকে রিকশা থেকে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে কোপাতে থাকে আসামিরা। রিকশাচালক ইলিয়াস ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে রিকশা নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আসামিরা সুলালকে হত্যা করে খালে ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে।’
আইনজীবী সুদীপ জানান, ‘এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির পরিদর্শক হাবিবুর রহমান ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ গঠনের পর মোট পনেরো জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দিয়েছেন।’