৪৮ বছরের আইনি লড়াই শেষে ফিরে পেলেন জমি

7

রাউজান প্রতিনিধি

দৃষ্টিনন্দন পাকা ভবনের পেছনের অংশটি নির্মাণ করা হয়েছিল অন্যের জায়গায়। অবৈধভাবে ভোগদখলে থাকলেও ৪৮ বছরের আইনি লড়াই শেষে ৯০০ বর্গফুটেরও অধিক জায়গা প্রকৃত মালিক পক্ষকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাদীগণের উত্তরসূরী কাজী মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার বিকালে আদালতের নির্দেশনায় ঢোল পিটিয়ে আর লাল পতাকা গেড়ে ৯০০ বর্গফুটেরও বেশি জায়গা উদ্ধার ও অবৈধভাবে নির্মাণ করা বসতঘরের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী জজ রাউজান চট্টগ্রামের পক্ষে (ভারপ্রাপ্ত) নাজির রাজু বৈদ্য, জারী কারক মুহাম্মদ উজ্বল মিয়া, সার্ভে কমিশনার অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ সোহেল, রাউজান থানার এসআই কিশোর কুমার দে। আদালতের ফোর্সসহ পুলিশ ফোর্স উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করে। এসময় স্থানীয় সার্ভেয়ারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জয়ের জন্য দীর্ঘ সময় আইনী প্রক্রিয়া চলার সময়ই বাদির মৃত্যু হয়েছিল অনেক আগেই। তবে ৪৮ বছর পর পূর্ব পুরুষের জায়গা বুঝে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়েছেন বেঁচে থাকা ওয়ারিশরা।
জানা যায়, রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদীয়া সমাজের কাজী বাড়ির একটি জমি দখল-বেদখল নিয়ে ১৯৭৫ সালে মামলা হয়। স্থানীয় মৃত কবির আহমদসহ তার ভাই-বোনদের খতিয়ানভুক্ত কিছু জায়গা বিবাদী দুদু মিয়াসহ অন্যরা অন্যায়ভাবে দখলে নিয়ে নিলে জায়গা উদ্ধারে তৎকালীন মুন্সেফী কোর্টে স্বত্ব সাব্যস্ত মামলা দায়ের করেন কবির আহমদসহ ভাইয়েরা। ১৯৭৯ সালে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞাসহ মামলাটিতে বাদী পক্ষ জয় লাভ করে এবং মানবিক দিক বিবেচনায় ১২০ বর্গফুট জায়গা রান্না ঘরের জন্য বিবাদীদের ছেড়ে দেন। একই সালে চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে আপিল করে বসে দখলদার বিবাদীরা। এতেও পরাজিত হন তারা। পরবর্তীতে হাইকোর্ট বিভাগ (চট্টগ্রাম বেঞ্চে) ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯০ সালে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে আরো একবার পরাজিত হয়। পরবর্তীতে ১২০ বর্গফুট রান্না ঘরের জন্য দেওয়া জায়গাসহ বিবাদী আদালতের আদেশ অমান্য করে দখলে নিয়ে নেয় ৯০০ বর্গফুটেরও অধিক জায়গা এবং নির্মাণ করে সীমানা প্রাচীর। এতে পুনরায় নিয়ম অনুযায়ী নিম্ন আদালতে বাদীপক্ষ ১৯৯১ সালে মিস মামলা দায়ের করলে আদালত কমিশন নিয়োগ করেন এবং আদালত অমান্য করায় বিবাদীদের ৪২ দিনের সাজা প্রদান করে জায়গা বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। এরপর শাস্তি মওকুফের জন্য বিবাদী হাইকোর্টে আপিল করার বিষয়সহ বিভিন্ন আইনি জটিলতার অবসান ঘটিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাপূর্বক জায়গার প্রকৃত মালিক তথা বাদীর উত্তরসূরীদের দখল দেন আদালত।
ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের উত্তরসূরী কাজী মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।