১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ জাপানের রাজধানী টোকিওতে শুরু হয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ হলো দুদিনব্যাপী ‘২য় টোকিও বাংলা বইমেলা, ২০১৯।’ বইয়ে হোক মুক্তি – মন, মনন ও মানসের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘২য় টোকিও বাংলা বইমেলা-২০১৯’। টোকিও শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত স্যাক্রেড হার্ট ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এই বইমেলায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ও জাপানী নাগরিকদের সমাগম ঘটে। বাংলা ভাষা ও বাংলা বইকে ভালবেসে তাদের এ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
টোকিও বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিওর মান্যবর রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জাপানে সৃজনশীল এ ধরনের আয়োজনে বাংলাদেশ দূতাবাস সবসময়ই আয়োজকদের পাশে থাকবে।
মেলার উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ডঃ সলিমুল্লাহ খান এবং ওহাশি মাসায়াকি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি মোহন রায়হান ও মাতসুশিরো হোরিগুচি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরোও উপস্থিত ছিলেন ইউসিনারি কাসু, কেইকো আজুমা, সাকাগুচি কাজুতাকা, মিজুকামি তেতসু, আব্দুর রহমান, ডাঃ শেখ ফজলে আকবর, মুন্সী খ আজাদ, আনোয়ারুল করিম, জুয়েল আহসান কামরুল।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন টোকিও বইমেলা কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ শাহরিয়ার মোঃ সামস সামি। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, জীবন তো বটেই, জ্ঞান-বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। তাই, প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বইমেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মহাসচিব শিল্পী কামরুল হাসান লিপু। ডাঃ তাজবীর আহমেদের উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মোড়ক উন্মোচন করা হয় টোকিও বইমেলা কমিটির প্রথম প্রকাশনা বসন্ত বরিষণ। উল্লেখ্য যে, মেলা উপলক্ষে কবি মোহন রায়হান, আনার কলি, মুকুল মোস্তাফিজ ও শিল্পী কামরুল হাসান লিপুর বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করা হয়।
এবারের মেলায় টোকিও বইমেলা কমিটির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছেন স্বনামধন্য লেখক ও প্রকাশকগণ। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বইপত্র প্রকাশন, ধ্রæবপদ, শিখা প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, পাঞ্জেরী, আগামী প্রকাশনী, বিদ্যাপ্রকাশ, এক রঙা এক ঘুড়ি প্রকাশনী ও সাওল প্রকাশন। বাংলাদেশ দূতাবাস, টোকিও এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম, জাপানের বিশেষ স্টল ছাড়াও ছিল জাপান প্রবাসী লেখকদের স্টল।
প্রবাসী জনপ্রিয় বাংলাদেশী লেখকদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত সুপরিচিত লেখক ডঃ সলিমুল্লাহ খান, কবি মোহন রায়হান এবং তরুণ লেখক কিঙ্কর আহসানের উপস্থিতি উৎসাহী পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল।
লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনাপর্বগুলো মেলায় যোগ করে ভিন্নমাত্রা। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জাপানী শিল্পীদের মনমুগ্ধকর পরিবেশনা, শিশুকিশোরদের অংশগ্রহণে যেমন খুশি তেমন বলা পর্ব এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বিদেশী বীর প্রতীক ডবিøউ এস ওডারল্যান্ডকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী-মেলার আকর্ষণ বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
মেলা কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ ও উপদেষ্টাগণ আগামীতেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সৃজনশীল এ আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস, জাপান ও প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।