১২০ কিমি গতিতে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়

10

 

পূর্বদেশ ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভ‚ত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে, যা আরো শক্তি সঞ্চয় করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আগামী রোববার সন্ধ্যার দিকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় এই সংস্থাটির এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে আজ সকাল নাগাদ নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর আরো শক্তি সঞ্চয় করে শনিবার সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এরপর আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে ২৬ মে সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে সেই ঝড়।
চলতি মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়।এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি দিয়েছে ওমান। আরবিতে এর অর্থ বালি।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে আজকের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তিনি জানান, শনিবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, যদি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় তবে তা পশ্চিববঙ্গ, সুন্দরবন, পটুয়াখালীর দিকে যাওয়া সম্ভাবনা বেশি। শনিবার এটি আরও নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাসে বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তরের আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপটি সামান্য উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এদিকে সারা দেশে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। গতকাল ঢাকাসহ দেশের ১৫ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে সর্বনিম্ন ১ থেকে সর্বোচ্চ ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে। যদি ঝড়বৃষ্টি হয়, তাহলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে, তা না হলে তাপপ্রবাহ আরও এলাকায় বিস্তারের শঙ্কা প্রকাশ করেছে অধিদফতর।
গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ঈশ্বরদী ও রাঙ্গামাটিতে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ডে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বুধবার ঢাকায় ছিল ৩৪ দশমিক ৯, গতকাল তা ৪ ডিগ্রি বেড়ে ৩৮ ডিগ্রিতে উঠেছে, একইভাবে রাজশাহীতে ছিল ৩৩ দশমিক ৩, গতকাল ৫ ডিগ্রি বেড়ে ৩৮, রংপুরে ছিল ৩১ দশমিক ৫, আজকে তা ৭ ডিগ্রি বেড়ে ৩৮, ময়মনসিংহে ছিল ৩৫ দশমিক ৫, গতকাল তা ২ ডিগ্রি বেড়ে ৩৭ দশমিক ৬, সিলেটে ছিল ৩৬ দশমিক ৫, গতকাল ১ ডিগ্রি বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ছিল ৩৫ দশমিক ৮, যা গতকাল এক ডিগ্রি বেড়ে ৩৬ দশমিক ১, খুলনায় ছিল ৩৬ দশমিক ৫, যা গতকাল ১ ডিগ্রি বেড়ে ৩৭ দশমিক ৭ এবং বরিশালে ছিল ৩৫, গতকাল তা ২ ডিগ্রি বেড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। এই হিসাবে দেশে সর্বনিম্ন ১ থেকে সর্বোচ্চ ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে।
এদিকে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান, খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, খেপুপাড়া এবং ভোলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আজকের পূর্বাভাসে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
শনিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায়, যেমন- ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদফতর।
সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অফিস উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে না যেতে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।