১২শ আসন খালি ‘কারণ’ খোঁজার তাগিদ

6

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসন খালি থাকার কারণ কি শুধু ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘অটোমেশন পদ্ধতি’ নাকি ‘মানের ঘাটতি’, তা খুঁজে দেখার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বেগম রোকেয়া সুলতানা।
গতকাল শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় এ তাগিদ দেন তিনি।
সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএমসিএ, যারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে।
সভায় বিপিএমসিএ জানায়, বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১ হাজার ২০০টি আসন খালি রয়েছে। খবর বিডিনিউজ’র
সভার শুরুতে বিপিএমসিএ সভাপতি এমএ মুবিন খান বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় বর্তমান অটোমেশন পদ্ধতির কারণে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না। অসংখ্য আসন খালি রয়েছে। গরিব মেধাবীদের জন্য রাখা আসনেও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এটা বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত।
২০২২ সালে পাস হওয়া আইনে বলা আছে, মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজের ৫ শতাংশ আসন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।
বিপিএমসিএর দেওয়া তথ্যে উঠে এসেছে- মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটাতেও আসন খালি। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন পূরণ হয়নি। অথচ কোভিড মহামারির সময় একটি আসনও খালি ছিল না।
ভর্তিতে ‘অটোমেশনের কারণে’ গত বছর ধরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে বলে দাবি বিপিএমসিএ এর। অটোমেশন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে ‘পাইলট’ হিসেবে নিয়ে এর ওপর আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করার প্রয়োজন ছিল বলে বক্তাদের কথায় উঠে আসে।
বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে অটোমেশনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নতুন নয়, আগেও ছিল, এমন কি পাকিস্তান আমলেও ছিল। অনেকে ভোগান্তির শিকার হয়েছে, আমি নিজেও একজন ভুক্তভোগী। এ অটোমেশনের কারণে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। তবে বর্তমানে যে অটোমেশন পদ্ধতি রয়েছে, তার কারণে সত্যিই কি শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি অন্য কোনো কারণ (মানের ঘাটতি) রয়েছে, সেটা তলিয়ে দেখা দরকার।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভালো শিক্ষক’ নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে রোকেয়া সুলতানা বলেন, ভালো শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার্থী আসবে না। রোগীও থাকতে হবে, যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নিতে পারবে। অন্যান্য সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে।
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল কলেজের প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১:১০। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদিত পদের শতকরা ২৫ শতাংশের বেশি রাখা যাবে না।
বিপিএমসিএ এর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান রওশান আরা বলেন, মালিক পক্ষকে ‘কোয়ালিটি’ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যে সব হাসপাতালের মান ভালো, তাদের ওখানে আসন খুব একটা খালি নেই।
বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে চালু হয় অটোমেশন পদ্ধতি, যা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মেধাবীদের টপকে শুধু টাকার জোরে কেউ যেন ইচ্ছামতো কলেজের আসন দখল করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগটি নেয় সরকার।
সভায় একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিপিএমসিএ জানায়, এমবিবিএস কোর্সে প্রতিবছর ভর্তির জন্য ১১ হাজার ৫৮৮টি আসনটি রয়েছে, যার মধ্যে ৩৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আছে ৫ হাজার ৩৮০টি। ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে ৬ হাজার ২০৮ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ৩ হাজার ৬৫৭টি আসন দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ, যা মোট আসনের প্রায় ৬০ শতাংশ। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫৫১টি আসন। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এখন সংরক্ষিত ফাঁকা আসন ৬২৮টি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আব্দুল মোমেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি জামাল উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম চৌধুরী এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষরা।