হোটেল রামাদার এমডির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের ফাইভ স্টার মানের ‘হোটেল রামাদার’ এমডি জসীম উদ্দীন আহমদ ও তাঁর স্ত্রী তানজিনা সুলতানা জুহির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান। এ ছাড়া জসীম উদ্দীনের ব্যবহৃত বিলাস বহুল রেঞ্জ রোভার গাড়িসহ বন্ধকী সম্পত্তি ক্রোকেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার পদ্মা ব্যাংকের ৮৮ কোটি টাকা খেলাপী ঋণের মামলায় এ আদেশ দেওয়ার বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন আদালতটির বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম।
ব্যাংকের দরখাস্ত ও আদালতের আদেশ সূত্রে জানা গেছে, খেলাপী জসীম উদ্দীনের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়ীয়া এলাকায়। নিজ এলাকায় দুই হাতে টাকা দান করে রীতিমত দানবীর বনেছেন। এমনকি ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে ইফতার বিতরণ, ১০০ মেয়ের বিয়ের খরচ প্রদান ও ১০০টি মসজিদে ৫ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়েও ঘোষণা দিয়েছেন। চাল-চলনে ধণাঢ্য হলেও ব্যাংকের খেলাপী ঋণের টাকা নানান টালবাহানায় ঘুরাচ্ছিলেন নগরীর সুপরিচিত মহল মার্কেট, কক্সবাজারের রামাদান হোটেল এবং জেসিকা ট্রেডিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দীন আহমদ।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার প্রচারিত সোলে ডিক্রি থেকে জারী মামলার উদ্ভব হয়। মূল অর্থঋণ মামলায় ডিক্রিদার ব্যাংকের দাবি ৮৬ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার এক টাকা হলেও সুদ মওকুফ সুবিধা দিয়ে ৬০ কোটি টাকায় মূল মামলাটি নিস্পত্তি হয়েছিল। খেলাপীরা সোলেনামার শর্ত মোতাবেক কিস্তিতে টাকা পরিশোধ না করায় সোলেনামা বাতিল হয়। সোলেনামার শর্ত মোতাবেক সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করে ডিক্রিদার ব্যাংক হালনাগাদ সুদসহ ৮৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫ হাজার টাকা আদায়ের দাবিতে জারি মামলা দায়ের করে। ব্যাংকের আবেদন মঞ্জুর করে বন্ধকী সম্পত্তি মহল মার্কেট নিলামে বিক্রির জন্য গত ২৭ মার্চ ধার্য থাকলেও খেলাপী জসীম উদ্দীন এজলাসে উপস্থিত হয়ে ৩ কোটি টাকা প্রদানের শর্তে নিলাম স্থগিত করার এবং সোলেনামা বহাল রাখার আবেদন করেন। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত দরখাস্ত না মঞ্জুর করেন। একইদিন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আবেদন করে ব্যাংক। এমন আবেদনে টনক নড়ে খেলাপী জসীম উদ্দীনের। পরেরদিন আদালতে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেন তিনি। সোলেনামার শর্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে বকেয়া হওয়া ১৩ কোটি টাকার অবশিষ্ট টাকা পরিশোধের জন্য আদেশ দেন আদালত। কিন্তু এ টাকা পরিশোধ না করায় ব্যাংকের আবেদন মঞ্জুর করে খেলাপী দুইজনকে গত ৪ এপ্রিল দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন অর্থঋণ আদালত। একইসাথে গতকাল মঙ্গলবার ৩৪ ধারার দরখাস্ত শুনানীর জন্য দিন ধার্য করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার শুনানীর দিন আসামিদের আইনজীবীরা ১২ কোটি দাখিল ব্যর্থতায় দেয়া আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট ডিভিশনে রীট মামলা দায়ের করে স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করে। হাইকোর্ট গত সোমবার শুধুমাত্র রুল ইস্যু করেন। অর্থঋণ আদালতে উচ্চ আদালত কর্তৃক সুনির্দিষ্ট স্থগিতাদেশের অভাবে অর্থঋণ জারি মামলা স্থগিত করার সুযোগ নেই বলে জানায়। তাই আসামিদের পক্ষেও সময়ের আবেদনসমূহ সন্তোষজনক না হওয়ায় না মঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান। একই আদেশে জসীম উদ্দীন আহমদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদান করে আদালত।