হাসিনা ভারত থেকে বিবৃতি দিলে সম্পর্কের ক্ষতি হবে

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা বক্তব্য এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘অতিরঞ্জিত’ খবরের কথা দেশটির হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মার নজরে এনে তার প্রতিকার চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। হাই কমিশনার গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে এসব বিষয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবং সাংবাদিকদের সামনে উপদেষ্টার ব্রিফিংয়ে বৈঠকের নানা বিষয় উঠে এসেছে। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘খুবই অতিরঞ্জিত’ প্রচার-প্রচারণার বিষয়টি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তুলে ধরেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা¤প্রতিক বিভিন্ন বিবৃতির বিষয়ে তিনি বলেছেন, ভারত থেকে আসা এ ধরনের বিবৃতি ভালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে ভারতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ, সে কথা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন।
আসন্ন দিনগুলোতে ‘জনগণকেন্দ্রিক সম্পৃক্ততার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন এবং নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতের মত প্রধান প্রধান বিষয়গুলো বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন তিনি।
পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আসা নিয়ে এক প্রশ্নে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ বলেন, আমি বলেছি, এটা সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে না। আমি তাকে বলেছি, সরকারের অবস্থানও এটাই।
তিনি বলেন, একটা স্টেটমেন্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এসেছে, যেটা আসলে এই সরকারের জন্য স্বস্তিকর হচ্ছে না। আমরা চাই, তিনি ভারতে বসে যেন এটা না করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতীয় মিডিয়ার রোল নিয়ে আমি এটুকু বলেছি যে, এখানে কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমরাও তদন্ত করছি। আমরা খবর নিয়েছি, এমনকি প্রধান উপদেষ্টা হিন্দু সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে বসেছেন।
আমরা চাই, সবাই যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। কারও ওপর কোনো নৃশংসতা এই সরকার বরদাস্ত করবে না। যেটা হয়েছে, আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ যে প্রত্যেকটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তদন্ত করে যাকে দোষী পাওয়া যাবে, তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।”
হাই কমিশনারকেও একই কথা বলার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, বলেছি যে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম এটাকে অতিরঞ্জিত করছে এবং অতিরঞ্জিত করে খারাপ পরিবেশ তৈরি করছে, এটা তাদের করা উচিত না।
এক সময় কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা তৌহিদ হোসেন সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে বলেন, সীমান্ত নিয়ে আমি যেটা বলেছি, যেটা গুরুত্ব দিয়েছি যে, দুদেশের সম্পর্ক জনগণকেন্দ্রিক হবে।
শুধু সরকারের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক, মানুষের কোনো ভূমিকা থাকবে না, মানুষ সন্তুষ্ট হল বা অসন্তুষ্ট হল- আমি তাকে এটাও বলেছি, আছে কিছু সমস্যা, সেটা আমাদেরকে দূর করতে হবে। মানুষ যেন ভালো বোধ করে তারা বন্ধু, শুধু সরকার মনে করলে হবে না।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, এই একটি ইস্যু উনি (হাই কমিশনার) একটু ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন। আমি বলেছি যে, আমরা চাইলে, আমরা দুপক্ষ যদি চাই আমরা অবশ্যই বন্ধ করতে পারি। আমি তাকে এটাও বলেছি, আমি যখন মুক্ত মানুষ ছিলাম, এটা নিয়ে ব্যাপক লিখেছি। এটা আমার বিশ্বাস। এখনও আছে, আমরা চাইলে এটা বন্ধ করতে পারি।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তিস্তার কথা আমি এটুকু বলেছি যে, পানি কম আছে জানি। এমনকি তিস্তায় একদেশের জন্য যে পানি প্রয়োজন তাও নাই। কিন্তু আছে তো। দেখা যায় যে, (ভারত প্রান্তের) দুইপাড়ে খাল যাচ্ছে, সেচ হচ্ছে আর মাঝখানে বাংলাদেশ শুকনা। এটা আপনি উপর থেকে ছবি নিলেও দেখতে পাবেন।
আমি তাকে বলেছি, পানি কম আছে, খুবই কম আছে, কিন্তু আছে তো। ১০০ কিউসেক পানি যদি থাকে আমাদেরকে ৩০ কিউসেক পানি কি আপনি দিতে পারেন না? এ শব্দটা ব্যবহার করেছি।
ভারত হাই কমিশনার ছাড়াও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হেলেন লাফেইভ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বার্নড স্পানিয়ের গতকাল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
চীনের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা না হওয়ার কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, তাদের যে সমস্ত উদ্বেগ আছে। তাইওয়ান বলেন, তিব্বত বলেন আমরা তাদেরকে সুষ্পষ্ট সমর্থন দিয়েছি, এখনও সেই সমর্থন আছে।
ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনিও বলেছেন, আমিও বলেছি- চীনের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারে এখানে কে এল, না এল সেটা বিষয় না। চীনের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সুসম্পর্ক আছে। আমি এটাও বলেছি যে, আসলে বাংলাদেশের মানুষ চীনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে।
কাজেই সরকারে যে আসুক, কালকে এক সরকার ছিল, আমরা এসেছি, আমাদের পরে আরেকটা সরকার আসবে- কিন্তু চীনের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকবে।
নতুন সরকারের সামনে অর্থনৈতিক ‘টানাপোড়েনের’ ক্ষেত্রে চীনের সহায়তা কামনা করার কথাও বলেন তৌহিদ হোসেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, একেবারে রুটিন ইস্যু। কোনটা কি হবে, না হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (আইপিএস) নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ার কথাও বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ক‚টনীতিকদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তারা এ সরকারকে সমর্থন করে এবং তারা চায় এই সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে।