হাসিনার পতনের দিনে সহিংসতায় আসলে কত মানুষ মারা গেছেন?

7

বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশে গত সোমবার রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, স্থাপনায় আক্রমণ, পিটুনি কিংবা হামলায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৩৭ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহতদের মধ্যে কয়েকটি জায়গায় পুলিশে বা বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তি যেমন রয়েছেন, তেমনি থানায় ঢুকে বা হামলা করে পুলিশ সদস্যদের হত্যারও বেশ কিছু ঘটেছে। যদিও সোমবার বিকেল থেকেই থানাগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ায় অনেক মৃতদেহই হাসপাতালে আসেনি বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র একটি মৃতদেহ এসেছে, যেটি একজন পুলিশ সদস্যের। এছাড়া উত্তরা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একজন পরিদর্শকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনের সোমবার ছিলো অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন। ওই দিনই দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। দুপুরের পর থেকেই আন্দোলনকারী ও বিরোধী বিভিন্ন দলের সমর্থকরা দেশ ব্যাপী বিজয় মিছিল বের করে।
বেশ কিছু এসব বিজয় মিছিল থেকে বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী, এমপি কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া থানায় হামলাকে কেন্দ্র করে ঢাকার উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় গুলিতে অনেকে নিহত হন।
সোমবার রাত পর্যন্ত ৩৭ জনের মৃতদেহ আসার তথ্য ছিলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে ত্রিশটি মরদেহই ছিলো যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আসা। এর বাইরে চানখাঁরপুল ও বাড্ডা থেকে দুটি করে মৃতদেহ আসার তথ্য ছিলো। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ছিলো আরও তিন জনের।
যাত্রাবাড়ীতে দুপুরে পুলিশের গুলিতে কয়েক জনের মৃত্যুর পর বিকেলে বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষে ও হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও ধারণা করা হয়।
যদিও উত্তরার দুটি হাসপাতালে বিশটি মৃতদেহ দেখার কথা নিশ্চিত করেছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি নিজেই সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার দিকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে তেরটি এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে সাতটি মৃতদেহ দেখেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অন্তত আটজন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় একজন জানিয়েছেন সেখানকার আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহত অনেককে নেয়া হয়েছে, যাদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিলো।
ঢাকার সাভারে রেডিও কলোনি ও পাকিজার মোড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নারীসহ অন্তত ১৮জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের একটি অংশ সেখানকার থানা রোড এলাকায় সাভার মডেল থানায় হামলা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এর পর সেখানে দফায় দফায় প্রায় তিন ঘণ্টা সংঘর্ষ ও এলোপাথাড়ি গুলি চলতে থাকে। এসব সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই ব্যক্তিরা নিহত হন। এছাড়া বাইপাইল এলাকায় সংঘর্ষে আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ওদিকে যশোরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালকানাধীন হোটেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত একুশ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন বিদেশী নাগরিক ছিলেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ হোটেলে ঢুকে পড়ে কিন্তু আরেকটি অংশ পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে আগে থেকে থাকা কিছু ব্যক্তির সাথে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনও হোটেলে উপরের দিকে থাকায় আগুন লাগার পরে আর নামতে পারেননি।
এছাড়া নাটোরে শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসা থেকে চারটি আগুনে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে মি. ইসলাম ও তার ছোটো ভাইয়ের বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেনের বাসায় আগুন দেয়ার পর সোমবার রাতে ছয় জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস। চাঁদপুরে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় একদল বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে নয় জনের মৃত্যু হয় পরে তাদের লাশ মাওনা চৌরাস্তা আল-হেরা হাসপাতালে নেয়া হয়। সোমবার গভীর রাতে কুমিল্লার তিতাস থানা পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আর গুলিতে নিহত হন দাউদকান্দি উজেলার তুজারভাঙ্গা গ্রামের বাবু মিয়া নামে এক ব্যক্তি।
বরিশালের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ এমপির কালিবাড়ি রোডের পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও চাটখিল থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সোনাইমুড়ি থানা পুলিশ হামলাকারীদের ওপর গুলি ছুড়লে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়। এতে সোনাইমুড়ি থানার চার পুলিশসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।