হালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ

6

হাটহাজারী ও রাউজান প্রতিনিধি

হালদা নদীতে ডিম (নমুনা) ছেড়েছে মা-মাছ। যে কোন সময় মা-মাছ (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাউশ) পুরোপুরিভাবে ডিম ছাড়তে পারে- এ আশায় নদীর পাড়ে উৎসবের অপেক্ষায় শত শত ডিম সংগ্রহকারী।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফা হালদায় বিক্ষিপ্তভাবে ডিম ছেড়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ও হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া।
তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকুলে আছে। গত কয়েকদিন পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে, পাহাড়ি ঢলও আছে। পাশাপাশি পানির কোয়ালিটিও ভালো। ডিম ছাড়ার জন্য এটা সুন্দর পরিবেশ। আশা করছি, মঙ্গলবার রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছাড়তে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভাটার সময় সকাল ছয়টার পর থেকে নমুনা ডিম দেখা যায় নদীর পাঁচ থেকে সাতটি স্থানে। এছাড়া বেলা ১১টার পর জোয়ারের সময় নদীতে ৮ থেকে ১০টি স্থানে মা মাছগুলো ডিম ছাড়া শুরু করে।
ডিম ছাড়াকে কেন্দ্র করে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার গড়দুয়ারা নয়াহাট, মদুনাঘাট, গড়দোয়ারা, মাছুয়াঘোনা, মাদার্শা, রামদাশ মুনিরি হাটমুন্সির হাট, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, পশ্চিম গহিরা বড়ুয়াপাড়া, দক্ষিণ গহিরা, গহিরা মোবারক খীল, গহিরা জামতল, পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া, আজিমের ঘাট, মগদাই, নাপিতের ঘাট, পশ্চিম আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, সার্কদা মোকামীপাড়া কচুখাইন ও উরকিরচরে বসবাসকারী ডিমসংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন।
হালদা সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও পশ্চিম গুজরা ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, নমুনা ডিম পাওয়ার খবরে এখন নদীর বিভিন্ন স্থানে সংগ্রহকারীরা অবস্থান করছেন।
গতকাল বিকেলে হালদা পাড়ে ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর ও প্রদীপ দাশ জানান, হালদায় মা-মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। প্রতি নৌকায় ২০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন তারা। তবে রাতের দিকে পুরোদমে মা-মাছ ডিম ছেড়ে দিতে পারে। তাই, ডিমসংগ্রহের জন্য প্রায় ৫০০ জেলে ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন। সংগ্রহ করা ডিম থেকে পোনা তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন মিনি হ্যাচারি ও মাটির কুয়াও প্রস্তুত।
ডিমসংগ্রহকারী হরিরঞ্জন দাশ বলেন, ভোরের দিকে কিছু ডিম পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিন বালতি ডিম পেয়েছি।
খলিফার ঘোনার ডিম সংগ্রহকারী মুহাম্মদ হারুন বলেন, এবার নদীর নিচের দিকে ডিম সংগ্রহের নৌকা বেশি। এবার নিচের দিকে ডিম পাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা বলেন, ডিম পাওয়ার খবরে হালদার বিভিন্ন স্পটে ডিম সংগ্রহকারীরা অবস্থান করছেন। সবাই কমবেশি নমুনা ডিম সংগ্রহ করছেন। মৎস্য বিভাগ সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান জানান, মঙ্গলবার রাতে মা-মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়তে পারে।
মৎস্য বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, মঙ্গলবার হালদার বিভিন্ন স্পটে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে। নমুনা ডিম হলেও পরিমাণে বেশি। আশা করছি, রাতে (মঙ্গলবার) বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে বড় মা-মাছ পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছেড়ে দেবে।
এদিকে মা-মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে এক শ্রেণির অসাধু চক্র। ওই চক্রটি কৃত্রিম রেণু উৎপাদনে সক্রিয় বলে জানা গেছে। গুজবের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা নজরদারিতে আছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরি সেন্টার ও চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমে হালদায় স্বাভাবিকের চেয়ে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। যেহেতু কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, আর নদীতেও জো (ডিম ছাড়ার মৌসুম) চলছে। বজ্রবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ আরও বাড়লে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করবে।