হালদায় ডলফিন ও মা মাছ মরা অব্যাহত

8

হাটহাজারী প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ চট্টগ্রামের হালদা নদীতে দুর্লভ প্রজাতির ডলফিন ও কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা-মাছ মরা অব্যাহত রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে একের পর এক ৬টি মা-মাছ ও ২টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হালদা পারের ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর। সর্বশেষ গত সোমবার (১ জুলাই) রাতে হালদা নদীর পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাটে আরও একটি দুর্লভ প্রজাতির ডলফিন ও মা-মাছ মরে ভেসে ওঠে। এদিকে, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নদীদূষণের কারণ খুঁজতে মাঠে নেমেছে কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধিরা।
জানা গেছে, সোমবার রাতে ভেসে আসা ডলফিনটিও বড় আকারের ছিল। আর মা-মাছটি আকারে ছোট। ধারণা করা হচ্ছে, ডলফিনটির ওজন ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং মা মাছটি ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের হতে পারে। তবে, ভারী বৃষ্টিতে নদীতে সৃষ্ট স্রোতের কারণে মৃত ডলফিন আর মা-মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। হালদায় জীববৈচিত্র্য ও মা-মাছের হঠাৎ অস্বাভাবিক মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন নদীর সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক, ডিমসংগ্রহকারী ও প্রশাসনের কর্তারা।
প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মা-মাছের হঠাৎ অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল, অক্সিজেন, কুলগাঁও এবং বড়দীঘির পাড় সংলগ্ন বেশ কিছু পোল্ট্রি, গৃহস্থালি, মানববর্জ্য, শিল্প-কলকারখানার বিষাক্ত ও তৈলাক্ত বর্জ্য তরলাকারে টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে ৬ থেকে ৮টি শাখাখাল হয়ে নদীতে পড়া এবং হাটহাজারীর খন্দকিয়া, কৃষ্ণ, কাটাখালী ও বাথুয়া খাল দিয়ে নদীতে পড়ছে গৃহস্থালি বিষাক্ত বর্জ্যকে দায়ী করে। আবার কেউ কেউ বলছে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্লভ প্রজাতির ডলফিন ও মা-মাছ মারা হচ্ছে।
তাই গত ৩০ জুন হাটহাজারীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজ্জামানকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন মৎস্য করে। এর আগে গত ২৩ জুন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানির দূষণের উৎসসমূহ চিহ্নিত করে মতামত প্রকাশের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে গত দুই দিন ধর নদীদূষণের কারণ খুঁজতে এসব খাল ও শিল্পাঞ্চল এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন সরকারি কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধিরা। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা হাটহাজারীর বুড়িশ্চরের খন্দকীয়া খাল, কৃষ্ণ খাল, শিকারপুরের কাটাখালী খাল, বাথুয়া খাল, চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওয়ের অনন্যা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ব্রাহ্মণ সাঁই খাল এবং বিভিন্ন খালি জমি (বিল) ঘুরে দেখেছেন।
পরিদর্শনদলে ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম মশিউজ্জামান, রাউজানের ইউএনও অংগ্যজাই মারমা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহীন বাদশা, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার গবেষণা কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন, হাটহাজারীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মাইদুজ্জামান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন সিকদার, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ, শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল খালেক প্রমুখ।
সরেজমিন ঘুরে দূষণের প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাটহাজারীর ইউএনও এ বি এম
মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, তাঁরা এসব খাল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনে নদীদূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে তারা দায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিদর্শনের প্রতিবেদন তৈরি করবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে থাকা হালদা গবেষক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, সোমবার রাতে দুর্লভ প্রজাতির ডলফিন ও মা-মাছ মরে ভেসে ঘটনাটি তিনি জেনেছেন এবং ভাসতে থাকা মরা ডলফিন ও মাছের ছবি পেয়েছেন। একের পর এক এ পর্যন্ত গত ১২ দিনে দুটি ডলফিন ও ৬টি মা-মাছ নদীতে মরে উঠল, এটি বড়ই অস্বাভাবিক ঘটনা। তাই, উৎস দূষণসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ সমন্বয় করে অনুসন্ধান করছেন।