হামাসের সামরিক প্রধানকে লক্ষ্য করে হামলা, নিহত ৭১

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার নির্ধারণ করা মানবিক অঞ্চলে গতকাল শনিবার ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছেন, জানিয়েছে ভূখন্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস বলেছে, তাদের নেতাদের লক্ষ্যস্থল করার যে দাবি ইসরায়েল করেছে তা মিথ্যা এবং হামলাটিকে বৈধতা দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেইফের পাশাপাশি হামাসের খান ইউনিস ব্রিগেডের কমান্ডার রাফা সালামাকেও লক্ষ্যস্থল করা হয়েছিল। ৭ অক্টোবরের যে হামলা ৯ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সূচনা করেছে তার মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে এ দু’জনও আছেন বলে দাবি তাদের।
রয়টার্স জানিয়েছে, দেইফ ইসরায়েলের সাতটি হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন, সর্বশেষ চেষ্টাটি হয়েছিল ২০২১ সালে।তিনি কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে আছেন। বিভিন্ন আত্মঘাতী হামলায় বহু ইসরায়েলির মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এ হামলায় অন্তত ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৮৯ জন আহত হয়েছেন। গাজা ভ‚খন্ডের যে এলাকায় হামলাটি হয়েছে সেই আল-মাওয়াসি একটি নির্ধারিত মানবিক এলাকা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অন্যান্য এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার যেসব নির্দেশ দিয়েছে সেগুলোতে তাদের বারবার এই এলাকাটিতে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আকাশ থেকে নেওয়া ঘটনাস্থলের একটি ছবি প্রকাশ করেছে, সেখানে তারা বলেছে, ‘বেসামরিকদের মধ্যে লুকিয়ে আছে সন্ত্রাসীরা’।
তবে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে ছবিটির সত্যাসত্য যাচাই করতে করতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, ‘যেখানে আঘাত হানা দেয়া হয়েছে সেটি খোলা একটি এলাকা, চারদিকে গাছপালা, বেশ কয়েকটি ভবন এবং ছাউনি আছে’। খবর বিডিনিউজের
এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে ইসরায়েলের এক সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ওই এলাকাটি কোনো তাঁবু কমপ্লেক্স না, বরং হামাস পরিচালিত একটি অপারেশনাল কম্পাউন্ড আর সেখানে আরও অনেক ফিলিস্তিনি অস্ত্রধারী ছিল, তারা দেইফকে পাহারা দিচ্ছিল।
তবে এ হামলায় দেইফ নিহত হয়েছেন কি না, তা পরিষ্কার হয়নি। ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা এখনও হামলার ফলাফল পরীক্ষা ও যাচাই করে দেখছি’।
এ হামলায় আহত অনেককে নিকটবর্তী নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতো আহতকে চিকিৎসা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, ইসরায়েলি হামলার তীব্রতার কারণে ‘তারা আর কাজ চালিয়ে নিতে পারছেন না’ আর চিকিৎসা সরবরাহেরও প্রকট অভাব রয়েছে।
এই হামলা দোহা ও কায়রোতে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কী প্রভাব ফেলবে তা পরিষ্কার নয়।
হামাস পরিচালিত গণমাধ্যম দপ্তর বলেছে, এ হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেসামরিক জরুরি পরিষেবার লোকজনও আছেন।
দেইফ সেখানে ছিলেন কি না, হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তা নিশ্চিত করেননি, ইসরায়েলের অভিযোগকে ‘ননসেন্স’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
সামি আল জুহরি রয়টার্সকে বলেন, ‘শহীদরা সবাই বেসামরিক। যা হয়েছে তা গণহত্যার যুদ্ধের আরও ভয়াবহ বৃদ্ধি, আমেরিকার সমর্থনে এটি হচ্ছে আর বিশ্ব নীরব’। এই হামলা প্রমাণ করেছে ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শান্ত এলাকায় হঠাৎ চালানো এ হামলায় সবাই বিস্মিত হয়ে গেছে। সেখানে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে আর যে আহতদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কিছু উদ্ধারকর্মী আছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
৩০ বছর ধরে হামাসের বিভিন্ন র‌্যাঙ্ক পেরিয়ে শীর্ষে আসেন দেইফ। তিনি গোষ্ঠীটির টানেল নেটওয়ার্ক ও বোমা তৈরির দক্ষতা গড়ে তোলেন বলে হামাসের বিভিন্ন জন জানিয়েছে।
মার্চে ইসরায়েল দাবি করে, তারা দেইফের ডেপুটি মারওয়ান ঈসাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তার মৃত্যু হয়েছে কি না, হামাস তা নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা সিটির পশ্চিমে উদ্বাস্তু লোকজনের জন্য গড়ে তোলা গাজা শিবিরের একটি মসজিদে ইসরায়েলের হামলায় আরও অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।